ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রুস্তম আলীর আদালত বর্জন করেছেন আইনজীবীরা।

সোমবার (২৯ নভেম্বর) সকাল থেকে তার আদালত বর্জন করা হয়। এর আগে গত ১০ নভেম্বর বিকেল ৩টায় আইনজীবীদের বার্ষিক সাধারণ সভায় ওই আদালতের বিচারককে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালত ত্যাগ করার আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্যে আইনজীবীরা বলেন, জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রুস্তম আলী আদালতে যোগদানের পর থেকে আইনজীবীদের প্রতি অবিচারসুলভ মনোভাব, অসদাচরণ ও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তার এসব কর্মকাণ্ডে জয়পুরহাট আদালত অঙ্গন কলুষিত হয়ে পড়েছে।

বিচারক রুস্তম আলী স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসামিদের জেল-জামিন দিয়ে আসছেন। এমনকি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের মামলায় দুই-তিন দিনের মধ্যে আসামিদের জামিন এবং পরবর্তীতে ধর্ষণসহ হত্যা মামলায় খালাস দিচ্ছেন। আসামিদের ৬০ বছর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে তিনি নিজেকে জাহির করে আদালতে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেন। তা ছাড়া অসহায় বাদীকে মিথ্যা অজুহাতে ৭ থেকে ৫ বছর জেল-জরিমানা ও অর্থদণ্ড দিয়ে থাকেন। এতে ওই আদালতে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বিচারক রুস্তম আলীর এমন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। তাই তাকে আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে ওই স্থান ত্যাগ করতে হবে। না করলে পরের দিন ২৯ নভেম্বর থেকে তার আদালত বর্জন হবে। এ সময় বিচারকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, আইনসচিবসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনূর রহমান শাহীন সোমবার দুপুরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিচারক মো. রুস্তম আলী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে পড়েন। এ রকম নানা অভিযোগ এনে আইনজীবী ও ভুক্তভোগীরা আইনজীবী সমিতিতে দরখাস্ত করেছেন। এরপর একটি সাধারণ সভায় আইনজীবীদের সিদ্ধান্তে ২৮ নভেম্বর বিচারককে আদালত ত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি আদালত ত্যাগ না করায় আমরা আজ সোমবার ২৯ নভেম্বর থেকে ওই আদালত বর্জন করেছি এবং তিনি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ওই আদালত বর্জন চলবেই।

জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে আইনজীবীরা ওই আদালত বর্জন করেছেন, এমন একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। আইনজীবীদের ওই আদালত বর্জন এখনো চলমান আছে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল পিপি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহনূর রহমান শাহীন, জিপি অ্যাডভোকেট মোমিন আহম্মেদ চৌধুরী, নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফিরোজা চৌধুরীসহ বার সমিতির সব আইনজীবী।

চম্পক কুমার/এনএ