তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারও ডুবেছে নৌকা। সাতক্ষীরার  কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ১৭ ইউপিতে রোববার (২৮ নভেম্বর) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে ৬টি ইউনিয়নে জিতেছেন নৌকার প্রার্থীরা। বাকি ১১ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।

অন্যদিকে, জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মাত্র ১২টিতে জিতেছেন নৌকার প্রার্থীরা। ১৩টিতে আওয়ামী লীগের ‌‘বিদ্রোহী’, ছয়টিতে স্বতন্ত্র, দুই ইউনিয়নে জামায়াত ও একটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তবে তালার খলিশখালি ইউনিয়নে ওয়ার্কার্স পার্টি ও তালা সদর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ী হওয়া ইউনিয়নে জোর বিতর্ক রয়েছে।

তালার খলিশখালি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোজাফফর রহমানকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী। ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাফফর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নে ‘নৌকা জয়লাভ’ করেছে। তবে স্থানীয় এমপি হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির। তিনি প্রভাব বিস্তার করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আমাকে ১০ ভোটে হার দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রকৃত অর্থে এখানে নৌকা জয়লাভ করেছে। আমি পুনরায় ভোট গণনার জন্য আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছি। চূড়ান্ত রায় আশা করি আমার পক্ষেই আসবে।

‘তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে জোরপূর্বক হারানো হয়েছে। তিনটি কেন্দ্র দখল, ভোটারদের মারপিট, এজেন্টদের মারপিট করে বের করে দেওয়াসহ একটি কেন্দ্রের ফলাফল পাল্টে দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় সিভিল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এটি করা হয়েছে’ বলে জানান জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘তালা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন কীভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেটি সকলেই জানেন। আমার নিশ্চিত বিজয়কে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন নৌকার প্রার্থী প্রশাসননির্ভর হয়েই সিস্টেমে জয়লাভ করেছেন। এসব ঘটনায় আমি উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছি। এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে লিখিতভাবে ছবিসহ জানিয়েছি।’

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ২০ সেপ্টেম্বর, দ্বিতীয় ধাপে ১২ নভেম্বর ও তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলায় ৭৮ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে তিনটি ধাপে ৫১টি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এতে ১৮টি ইউনিয়নে জিতেছেন নৌকার প্রার্থীরা। বাকি ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

দলের এমন বিপর্যয়ের বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, কোনো কোনো ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাই সঠিক হয়নি। এর মধ্যে দলের কোনো কোনো নেতা অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। সে কারণে ফল বিপর্যয় হয়েছে।

এমন বক্তব্যের সঙ্গে সুর মেলান কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক এনামুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিজের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেক নেতাই। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ আবার কেউ অন্য দলের প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। সে কারণেই অধিকাংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, ২৮ নভেম্বরের নির্বাচনে দুই উপজেলায় ১৭ ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে নৌকা, বাকিগুলো ‘বিদ্রোহী’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এ নিয়ে জেলায় ৫১ ইউনিয়নে ভোট শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে দেখা যায় আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের ফল বিপর্যয় ঘটেছে।

ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। সংগত কারণেই নৌকার বিদ্রোহীদের প্রশমিত করতে পারছি না। বহিষ্কারের চিঠি দেওয়া হলেও তাদের নিবৃত করা যাচ্ছে না। আবার মনোনয়নেও কিছুটা ভুলত্রুটি রয়েছে। পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় অনেক নেতাই ‘বিদ্রোহী’ বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। কোনো কোনো নেতা ভেতরে ভেতরে মদদও দিচ্ছেন। মূলত এসব কারণে নৌকার প্রার্থীরা ভোটে হেরে যাচ্ছেন।

এমএসআর