একসময় স্বামী সংসার ছিল সালেহা বেগমের (৭৩)। সংসার নিয়ে সুখেই দিন কাটত তার। স্বামীর নিজস্ব বসতবাড়ি না থাকায় খাসজমিতে বাড়ি বেঁধেছিলেন তারা। সময়ের ঘুরপাকে থাকার ঘড় ছারতে হয় তাদের। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানরাও মাকে ফেলে চলে যান।

দীর্ঘ সময় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকলেও বয়সের ভারে ও অর্থের অভাবে স্টেশনে রাত কাটাতে হয় তাকে। সারা দিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে রাত কাটে তার।

শুধু সালেহা বেগম নন, তার মতো মোমেনা, বাবলী, মিন্টু, রাশেদা, বাবলুসহ অনেকেরই সারা দিন মানুষের দ্বারে ঘুরে যা আয় হয় তা দিয়ে খাওয়া চলে আর সন্ধ্যা হলেই রাত কাটে ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে।

সালেহা বেগম (৭৩) ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা দিন মানুষের কাছত হাত পাতে যা টাকা হয়, সেডা দিয়া খাবার খাই। রাইতে স্টেশনে থাকি। থাকপার জায়গা নাই। বাপুগে রাতে খুব ঠান্ডা করছে সহে না। মোক কি কম্বল দিবেননি? 

সালেহা বেগম আরও বলেন, এবারত খুব ঠান্ডা গে। কত দিনে কম্বল দিবেতে সরকারটা? ঠান্ডা পালাহানে কম্বল কি করম হামা? তারাতারি দিলে ভালো হতো।

স্টেশনে থাকা বাবলু কান্নাজনিত স্বরে বলেন, মুই এতিম। মোর কেউ নাই। কোনোমতে একটা কাপড় দিয়া রাত কাটাই। হামাক দেখার কেউ নাই ভাই। সবাই হামাক নিয়া ফটো তুলে শুধু। হামাও তো মানুষ। কিন্তু মোক কেউ দেখে না।

সমাজকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মী জিয়াউর রহমান বকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও, বরাবরে আগেই শীত আসে আমাদের জেলায়। সরকারের পক্ষ থেকে যা শীতবস্ত্র দেওয়া হয়, তা অপ্রতুল। সরকারের পাশাপাশি যদি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা বিত্তবানগুলো এগিয়ে আসে তবেই সম্ভব। তবে শীতের শুরুতে শীতবস্ত্রগুলো দিতে পারলে সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষেরা সেটি নিয়ে শীতকে মোকাবিলা করতে সহজতর হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছি। রেলস্টেশনের বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেখানে কম্বল দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

এনএ