মো. ছবির উদ্দিন

প্রতিবন্ধিতা দমাতে পারেনি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. ছবির উদ্দিনকে (২২)। শত বাধা মোকাবিলা করে ডিগ্রিতে পড়ছেন তিনি। তবে করোনার সংকটে থমকে গেছে তার জীবন যুদ্ধ।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছবির উদ্দিন বলেন, অনেক কষ্ট করে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছি। দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া আমার জন্য সহজ ছিল না। অনেক সংগ্রাম করে এতদূর এসেছি। করোনার দুর্যোগের আগে মাদরাসায় থাকতাম। কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু করোনার কারণে এখন ঘরে বসা। পরিবারে বাবা-মা ও ভাই-বোনসহ ১২ জন। বাড়িতে টাকার অভাবে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া চলে না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বলে কাজেও নেয় না কেউ। অনেক কষ্টে আছি আমি। 

আমার জীবন যুদ্ধ অনেক কঠিন। অনেক কষ্ট করে প্রতিবন্ধী কার্ড করেছি। চার মাস আগে নয় হাজার টাকা পেয়েছি। সেই টাকায় বাসার বাজার করেছি। এখন টাকার অভাবে আছি। 

ছবির উদ্দিন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দশমিনা উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর গ্রামের কৃষক মো. হাসান আলী মল্লিক ও রাজিয়া বেগম দম্পতির একে একে চার ছেলে ও চার মেয়ের জন্ম হয়। তাদের সাত নাম্বার সন্তান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছবির উদ্দিন। 

ছবির উদ্দিন পূর্ব চতরা দাখিল মাদরাসা থেকে এসএসসি ও চর হোসনা আলিম মাদরাসা থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে গলাচিপা কোটকালী ফাজিল মাদরাসায় ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন তিনি।

ছবির উদ্দিন বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বরিশালে ২০ দিনের আইসিটিবিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে সার্টিফিকেট অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই। কিন্তু এখন একটা চাকরির বড় প্রয়োজন। তাহলে বাবা-মা ও ভাই-বোন নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারতাম।

ছবিরের বাবা মো. হাসান আলী মল্লিক বলেন, সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। আগে কোনোমতে সংসার চলত। এখন চালাতে পারি না। করোনা এসে সব শেষ করল। ছবিরের একটা চাকরি হলে আমি বেঁচে যেতাম।

কোটকালী ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, মাদরাসা চলাকালীন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছবির উদ্দিন ছাত্রাবাসে থাকত। এখন তো মাদরাসা বন্ধ। তার ও পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ জানাই।

আলীপুর ইউনিয়নের চাঁদপুরা ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. তোফায়েল হাওলাদার বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছবির উদ্দিন অনেক ভালো ছেলে। আমরা চেষ্টা করি তার ও পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। তবে আমাদের সহায়তার সুযোগ খুবই কম। এসব সহায়তায় তাদের সংসার চলবে না। আসলে ছবিরের একটা চাকরি হলে সুন্দরভাবে সংসার চলত।

মহিব্বুল্লাহ চৌধুরী/এএম