দেড় শতাধিক চাকরিপ্রার্থী, ৬০ জন কর্মচারী আর ৯টি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুই কোটিরও অধিক টাকা নিয়ে আরএম গ্রুপ নামে একটি রিসেলার প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জামানত গ্রহণ করেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য নেন। গাড়ি ভাড়া ও বাড়ি ভাড়া না দিয়েই উধাও পুরো প্রতিষ্ঠান। 

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ৬০ জন কর্মচারী, পারটেক্স, ওয়ালটন, এমইপি, টিসিএল, শাওমি, নোকিয়াসহ ৯টি কোম্পানি এবং দেড় শতাধিক চাকরি প্রত্যাশী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকার হিরন পয়েন্ট-২ ভবনের ভাড়া বাসায় অবস্থিত অফিসে বুধবার (১ ডিসেম্বর) সকালে চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে অফিস বন্ধ পান চাকরি প্রার্থীরা। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগী বৃষ্টি খন্দকার জানান, পত্রিকায় আরএম গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পদে আকর্ষণীয় বেতনে লোকবল নেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখতে পান। পরে তিনি নিজ পরিবারের বেকার চার সদস্যের জন্য চাকরির আবেদন করেন। আবেদনের পর চাকরি পেতে ২৫ হাজার টাকা করে জামানত দিতে হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আমজাদ হোসেন কিরণ ও ম্যানেজার তুষার খান। নির্ধারিত জামানত দিয়ে বুধবার সকালে চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান প্রতিষ্ঠানটি আর নেই। সুদৃশ্য সাইনবোর্ডগুলোও খুলে ফেলা হয়েছে।

নাসির উদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, কোম্পানির কাজ চালানোর জন্য আমার কাছ থেকে তিনটি মাসিক ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে মোটরসাইকেল ভাড়া নেয় প্রতিষ্ঠানটি। আর আমাকে একটি মোটরসাইকেল দেবে মর্মে ৫০ হাজার টাকা জামানত নেয়। আমি ভাড়াও পাইনি, জামানতও গেছে। আরও দুটি প্রাইভেটকার তারা ভাড়া করেছিল।

চাকরির জন্য জামানত দেওয়া নাইম হোসেন বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে জামানত দিতে বলেন কোম্পানির জিএম আমজাদ হোসেন কিরণ। আমি ২৫ হাজার টাকা জামানত দেই। ১ ডিসেম্বর কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এসে দেখি তারা পালিয়েছে। 

ওয়াল্টন গ্রুপের ডিলার লিঙ্কন বলেন, আমাদের কাছ থেকে এসি, ফ্রিজ নিয়েছে। কিন্তু কোনো টাকা দেয়নি। 
 
ঝালকাঠি সদরের পারটেক্স ফার্নিচারের ডিলার বিকাশ বিশ্বাস জানান, অফিসে ফার্নিচার লাগবে বলে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার ফার্নিচার নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ১৪ নভেম্বর ৮ লাখ টাকার একটি চেক দেয়। চেক ব্যাংকে জমা দিলে জানায় ৩শ টাকা আছে। 

তিনি বলেন, বুধবার সকালে টাকা আদায়ের জন্য অফিসে গেলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পাওনা টাকার জন্য মালিকদের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তারা রিসিভ করেননি।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে থেকেই অফিসের যাবতীয় মালামাল কুরিয়ার সার্ভিসে টাঙ্গাইলে পাঠিয়ে দিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন।  

ভবনের ম্যানেজার আবু তালেব জানান, নভেম্বরের শুরুতে ভবনটি ভাড়া নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তাদেরও টাকা না দিয়েই পালিয়েছে। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল বাকিতে নিয়ে টাকা পরিশোধ করেনি। এর বিপরীতে চেক দিলেও ব্যাংকে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় ওই চেক প্রত্যাখ্যান হয়। তাদের অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র ৩শ টাকা। 

জানা গেছে, আরএম গ্রুপের মালিক আমজাদ হোসেন কিরন যশোরের বিবি রোডের ঘোষপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদিনের ছেলে। 

বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজীমুল করিম বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর