রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কানাডা প্রবাসীর জমি দখল করে পাকা বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। গত ২৫ নভেম্বর থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ ফরিদপুর এলাকায় চলছে এই কর্মকাণ্ড। পৌর মেয়র অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাসের ইন্ধনে নির্মাণকাজ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মালিক পক্ষ।

তাদের অভিযোগ, লিখিত অভিযোগ দিলেও মেয়রের ইশারায় ব্যবস্থা নেয়নি গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। শেষে গত ১ ডিসেম্বর রাজশাহীর অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগ দাখিল হয়।

জমির একাংশের মালিক আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী খালেদা খাতুনের হয়ে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন অ্যাডভোকেট হাবিব উদ্দিন। মামলা নম্বর ৮০৫/২০২১। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তভার দেন। আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলায় আসামিরা হলেন- উপজেলার জাহানাবাদ এলাকার এদুন মুন্সির ছেলে রুহুল (৫৫), ফরাদপুর এলাকার এরফানের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৬০), একই এলাকার মৃত রফিকুলের ছেলে অসিম (৩০) ও আরাফাত (২৫) এবং সুলতানগঞ্জ গাউসিপুরের মৃত এহিয়া মণ্ডলের ছেলে আলাউদ্দিন।

মামলাটির বাদী খালেদা খাতুন জানান, তার স্বামী আনোয়ার হোসেন ও ভাসুর আফজাল হোসেনের নামে রয়েছে ওই জমি। খাজনা-খারিজও তাদের নামে। ভাসুরের মৃত্যুর পর ভাসুরের কানাডা প্রবাসী ছেলে, আমেরিকা প্রবাসী মেয়ে এবং জা ওয়ারিস হন। জা দীর্ঘদিন ধরেই ছেলের সঙ্গে কানাডায় থাকেন।

তাছাড়া তার স্বামী পরিবার নিয়ে রাজশাহী নগরীতে বাস করেন। তার স্বামী কয়েকমাস ধরে অসুস্থ। সেভাবে চলাফেলা করতে পারেন না। দুই পরিবারের জায়গা-জমি দেখাশোনা করছিলেন আধিয়াররা।

তার অভিযোগ, গত ২৫ নভেম্বর সকালে জমি দখল করে পাকাবাড়ি নির্মাণ শুরু করেন আসামিরা। বাধা দিতে গিয়ে আধিয়াররা দখলদারদের হামলার শিকার হন। তাদের প্রাণনাশ এমনকি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে ওই দিনই থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে আসে। কিন্তু পরক্ষণে আবারও কাজ শুরু করে দখলদাররা।

বাদী অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালীর ইন্ধনে জমি দখল চলছে। ফলে থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মেলেনি। শেষে আদালতের দারস্থ হতে হয়েছে। জমি অবৈধ দখল এবং বাড়ি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞার আদেশসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বাদী।

তবে দখল নয়, জমি বায়না দিয়ে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন বলে দাবি করেছেন দখলদার বিলকিস বেগম। তার দাবি, আড়াই কাঠা জমি তিনি ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দামে কিনতে বায়না করেন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি পাননি। পরে বিষয়টি পৌর মেয়র অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাসকে জানান। শেষে মেয়রের পরামর্শেই তিনি বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে প্রবাসীর জমিতে বাড়ি নির্মাণের পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন গোদাগাড়ী পৌর মেয়র অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস। তিনি বলেন, বাড়ি নির্মাণ শুরুর পর ঝামেলা হয়েছে। তার আগে তিনি এসবের কিছুই জানতেন না। পরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন মাত্র।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জমি সংক্রান্ত। ফলে এনিয়ে তাদের তেমন কিছুই করার থাকে না। তবুও অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। এনিয়ে এখনো আদালতের নির্দেশনা তারা পাননি। নির্দেশনা পেলেই আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই