‘আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি, আপনাদের কাছে ভোট দাবি করছি। আপনারা আগামী ২৬ তারিখ (ডিসেম্বর) আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। কেন্দ্র দখল করলে আমরা করব, জোর করে ভোট নিলে আমরাই নেব। কারণ, আমরা সরকারের প্রতিনিধি।’

শনিবার সন্ধ্যায় নিজ নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনকালে নোয়াখালী সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলু এমন মন্তব্য করেন। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

রোববার (৫ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার এমন মন্তব্য ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়। দাদপুরের ভোটারদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীড়ের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আগামী ৭ ডিসেম্বর অন্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৪ ডিসেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দাদপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বারাহীপুর এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলু। সেখানে তিনি নেতাকর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।

একই অনুষ্ঠানে নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলুর কর্মী ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে দেব। নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করলে তাদের তালিকা আমরা গুনে রাখব। প্রশাসন তাদের ধরার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচন প্রশাসনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু দাদপুরে ভোটের আগেই কেন্দ্র দখল করে জোরপূর্বক ভোট নেওয়ার ঘোষণায় বোঝা যাচ্ছে, এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হবে। প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলেন ভোটাররা।

জানতে চাইলে দাদপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলু যে বক্তব্য দিয়েছেন স্বীকার করে বলেন, আমি অন্য সূত্র ধরে এ কথা বলেছি। ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। এটি আমার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মিজানুর রহমান শিপনের কাজ। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানান।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মিজানুর রহমান শিপন বলেন, তিনি নিজ মুখে কেন্দ্র দখলের কথা বলেছেন। যার ভিডিও ইতোমধ্যে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি কেন উনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করব। শুধু এই ভিডিও নয়, নৌকার প্রার্থী ইতোমধ্যে তার সব নির্বাচনী পথসভা, শোডাউন, উঠান বৈঠকে ভোটের দিন জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে ভোট ছিনিয়ে নেওয়া ও ভোটের আগে আমার কর্মীদের এলাকা ছাড়া করার ঘোষণা দিয়ে আসছেন।

শিপন আরও বলেন, চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি (দেলোয়ার হোসেন দেলু) অনেক অনিয়ম করেছেন। এখন আবার ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করাসহ আমার লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আমি এসব বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছি।

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জুলকার নাঈম বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী যদি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে এমন ঘোষণা দেন, তাহলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট রির্টানিং কর্মকর্তা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

হাসিব আল আমিন/এসপি