এভাবেই শয্যাশায়ী দিন কাটছে শতবর্ষী স্নেহলতা করের

নিজেদের কোনো জায়গা-জমি নেই। নেই নিরাপদভাবে বসবাস করার মতো কোনো ঘরও। তাই স্থানীয় এক ব্যক্তির জায়গায় আশ্রয় নিয়ে জরাজীর্ণ একটি ঝুপড়ি ঘরে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটছে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়নের গৃদান টেঙ্গা গ্রামের শতবর্ষী বৃদ্ধা স্নেহলতা কর ও তার একমাত্র বিধবা মেয়ে জ্যোতি রানীর।

এদিকে বিধবা মেয়ে জ্যোতি রানী এলাকার মানুষের কাছে হাত পেতে যা জোটে, তা দিয়েই শারীরিকভাবে অক্ষম ও অসুস্থ মাকে নিয়ে খেয়ে না-খেয়ে কোনো রকম জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে বারবার ধরনা দিয়েও অসহায় এই পরিবারটির ভাগ্যে সরকারি কোনো সহযোগিতা জোটেনি বলে অভিযোগ তাদের।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৃদান টেঙ্গা গ্রামের প্রয়াত হরেন্দ্র চন্দ্র করের স্ত্রী স্নেহলতা কর। সহায়-সম্পদহীন স্বামী হরেন্দ্র চন্দ্র কর মারা যাওয়ার পর স্নেহলতা কর তার একমাত্র মেয়ে জ্যোতি রানীকে নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েন। সেই থেকে তিনি আশ্রয় নেন একই গ্রামের আব্দুল মন্নাফের পতিত বাড়িতে। সেখানে একটি ঝুপড়ি ঘরে থেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে পান বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন তিনি।

একপর্যায়ে মেয়ে জ্যোতি রানীকে বিয়ে দিয়ে মেয়ের জামাইকেও ঘরজামাই হিসেবে বাড়িতে আনেন স্নেহলতা। কিন্তু কয়েক বছর না যেতেই বিধবা হন জ্যোতি রানীও। এরই মাঝে তিন-চার বছর ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন স্নেহলতা কর। হারিয়ে ফেলেন শারীরিক শক্তি। এ অবস্থায় তার একমাত্র বিধবা মেয়ে জ্যোতি রানী (৫৫) এলাকার মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য নিয়ে মায়ের ভরণপোষণ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অসহায় হয়ে বসে আছেন স্নেহলতার মেয়ে জ্যোতি রানী

স্নেহলতা করের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিছানায় শুয়ে থেকে বলেন, বাবা, তোমরা আমারে একটু সরহারি জাগা দেও আর একটা ঘর দেও। আমি কতবার কইছি। কেউ আমার কথা হুনে না। আমার কেউ নাই। আমার মেলা অসুখ। উঠতাম পারি না। তোমরা আমারে বাঁচাও। আমি বাঁচতাম চাই।

একই আকুতি স্নেহলতা করের বিধবা মেয়ে জ্যোতি রানীরও। তিনি বলেন, ‘মা আমরারে লইয়া তিরিশ বছর ধইরে এইহানে পরের জাগাত আছে। আমরার কুনু জাগা নাই। ঘরও নাই। মা আগে গাঁওয়ে গাঁওয়ে গিয়া পান বেচত। কিন্তু কয়েক বছর ধইরে ঘরবডি (শয্যাশায়ী)। রোগে ভুগতাছে। আমি মাইনষের কাছে চাইয়া চাইয়া চলতাছি। আমার জামাইও মেলা আগেই মইরা গেছেগা। দুইডে ছেরি আছিন। হেইডিও বে অইয়া গেছেগা। আমরারে দেহনের মতো কেউ নাই। চেয়ারম্যান-মেম্বার দ্বারও কতবার গেছি। কিছতাই পাইছি না। মায়ের বয়স্ক ভাতার একটা কাড আছে। এই কার্ডের টেহাদে কিছতাই অয় না। তাই সরহারে যুদি আমারে একটা বিধবা ভাতার কার্ড কইরে দিত, খুব উপগার অইলয়।’

বৃদ্ধাকে আগে বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড করে দিয়েছি। এরপর পরিষদ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করছি। তবে ঘর দেওয়ার ক্ষমতা তো আমার নেই। তার ঘর দেওয়ার ব্যাপারে ইউএনও স্যারকে বলব।

মো. জসীম উদ্দিন, সদস্য, দুওজ ইউনিয়ন পরিষদ

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সেলিম মনিরের সঙ্গে কথা হলে ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের দায়িত্ব। শতবর্ষী স্নেহলতা কর ও তার মেয়ে জ্যোতি রানী চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, এটা সত্য। আমি স্নেহলতার নামে অনেক আগেই বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। এবার তার মেয়েকেও বিধবা ভাতার কার্ডের আওতাভুক্ত করব। এ ছাড়া যেহেতু তাদের জায়গা নেই এবং বসবাসের কোনো ঘর নেই, তাই তারা যে ব্যক্তির জায়গায় আছে, সেখানেই অন্য ব্যক্তিদের সহায়তায় আমি তাদের টিনশেডের একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

জিয়াউর রহমান/এনএ