জীবনের কাছে হেরে গেল অজয়
অজয় ক্লাসে খুব চুপচাপ ছিল। ওর স্বপ্ন ছিল পরিবারের জন্য কিছু করার। প্রায়ই বলতো, স্যার আমার অনেক স্বপ্ন আছে। করোনা আক্রান্ত হয়েছিল সে। ক্যাম্পাস খোলার পর ক্লাসে ঢুকেই বললো- স্যার করোনায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। সামনের সময়টুকু কাজে লাগাতে চাই। কিন্তু সামনের সময়টুকু কাজে লাগানো হলো না অজয়ের।
গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় কেঁদে কেঁদে ঢাকা পোস্টকে নিজের ছাত্রের কথাগুলো বলছিলেন ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক রাজেশ কুমার দাস।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, অজয়ের কথাগুলো বলতে গেলে কথা বের হচ্ছে না গলা দিয়ে। বুকের ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ও সব সময় পরিবার নিয়ে ভাবতো। চুপচাপ থেকে কি যেন ভাবতো। ভাবনাগুলো প্রকাশের আগেই স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে।
অজয়ের আরেক শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক শুভেন্দু সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অজয় আমার ছাত্র ছিল। এই রাষ্ট্রের কাছে আর নিরাপদ সড়ক চাই না। নিদেনপক্ষে চাই না কোনো বিচার। শুধু ঈশ্বর আমাদের শোক সইবার শক্তি দিক। ধৈর্য দিক। আর রাষ্ট্র ব্যবস্থাপকদের লজ্জা দিক।
বিজ্ঞাপন
অজয়ের সহপাঠী সাবিহা বিনতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওর বাবা বিদেশ থাকায় সে পরিবারের দেখভাল করতো। করোনায় তার বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছে। কম বয়সে অনেক দায়িত্ব ছিল ওর। গত বছর আমাদের আরেক বন্ধু সাইফকে আমরা হারিয়েছি। আজ অজয়কে হারালাম।
গতকাল দুপুরে সোনাপুর জিরো পয়েন্টে ট্রাকচাপায় মৃত্যু হয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী অজয় মজুমদারের।
অজয় মজুমদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের বাদল চন্দ্র মজুমদারের ছেলে।
অজয় মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। প্ল্যাকার্ড হাতে সদর উপজেলার সোনাপুর জিরো পয়েন্ট, সুপার মার্কেটের সামনে ও টাউনহল মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করেন তারা। তারা ‘অজয় হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর ও ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে ৬ দফা দাবি পেশ করেছি। তারা আমাদের দাবিগুলো শুনেছেন। দাবি পূরণের জন্য আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকল ছাত্র আমার সন্তানের মতো। আমরা কতটা শোকাহত তা বলার ভাষা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের ত্রুটি রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক সংস্কার করা হবে।
হাসিব আল আমিন/এনএফ