ধান কেটে মাঠে রেখে দিছিলাম। চার দিনের বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেল। এই ধানের আয়েই আমার সংসার চলে। বছরের এই সময়ে এসে এমন ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। আমরা যারা কৃষক তাদের সব শেষ। এভাবেই বলছিলেন শরণখোলা উপজেলার আমড়াগাছিয়া গ্রামের ধানচাষি বাদশা খলিফা।

বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ ও জোয়ারের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পাকা ধান, ধান-গমের বীজতলা, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ধান ঝড়ে পড়েছে। পানিতে পচেছে বোরো ধানের বীজতলা। হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ শীতকালীন সবজির গোড়া পচে গেছে। রোববার (০৫ ডিসেম্বর) থেকে সোমবার (০৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির ফলে আকস্মিক ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৫০ হেক্টর পাকা আমন ধান আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ২০৭ হেক্টর বোরোর বীজতলা, গমের বীজতলা ১৭ হেক্টর, ১৩৭ হেক্টর সরিষা ক্ষেত, ১৬১ হেক্টর খেসারি, ৩০ হেক্টর মসুর ডাল, ৩৫ হেক্টর শীতকালীন সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে টাকার অংকে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এই ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণের থেকেও বেশি।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের আলম নামে এক কৃষক জানান, ইয়াসের সময় আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। খুব কষ্টে বীজ যোগাড় করে আবারও ধান রোপণ করেছিলাম। এখন বৃষ্টির কারণে পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কারও কারও কাটা ধানও রয়েছে জমিতে। আমাদের সংসার চালানোই এখন কষ্ট হয়ে যাবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার সবজি চাষি শামসুল হক বলেন, আমাদের আয়ের বড় অংশ আসে শীতকালীন সবজি থেকে। কয়েকদিন পরই লালশাক, বেগুন, মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ওলকপি বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে শিকড় পচে গেছে। রোদ পেলে বেশির ভাগ সবজি ঢলে পড়বে।

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ফুলহাতা গ্রামের কৃষক রাকিব হাসান বলেন, আমাদের এলাকায় মাছ এবং এক ফসলি আমন ছাড়া তেমন কিছুই হয় না। হঠাৎ বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠব ভেবে পাচ্ছি না।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের বোরো চাষি হেমায়েত মোল্লা বলেন, বীজতলায় কেবল ধানের চারা এসেছিল। টানা বৃষ্টিতে আমাদের বোরো ধানের চারাগুলো পচে গেছে। এখন আবার ধান কিনতে হবে, প্রক্রিয়াজাত করে আবার রোপণ করতে হবে। অনেক দিন পিছিয়ে গেলাম আমরা।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, টানা বর্ষণে পাকা ধান, ধানের বীজতলা, গমের বীজতলা, শীতকালীন সবজি ও বেশ কিছু রবি শস্যের ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। মূলত টাকার অংকে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কত কৃষকের ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।

তানজীম আহমেদ/এসপি