চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দুটি লিফট অকার্যকর থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী, স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবনের সপ্তমতলা নির্মাণাধীন থাকায় বৃষ্টির পানি লিফটে ঢুকে এমন ঘটনা ঘটেছে। শিগগিরই লিফট চালু করা সম্ভব হবে।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের সপ্তম তলায় ১০ শয্যা বিশিষ্ট সিসিইউ, ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট ও ২০ শয্যার আইসিইউয়ের কাজ চলমান রয়েছে। রোববার থেকে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় হাসপাতালের দুটি লিফটের মধ্যে বৃষ্টির পানি ঢুকে। এতে সোমবার ভোর থেকে লিফট দুটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্বজনরা তাদের রোগীদের কাঁধে করে, কোলে নিয়ে, ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় করোনা ইউনিটে বয়স্ক নারী-পুরুষ ভর্তি রয়েছেন। এতে রোগীর বয়োবৃদ্ধ স্বজনদের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আবার ট্রলি না পাওয়ার কারণে জটিল রোগীকে তার স্বজনরা পাজাকোলা কিংবা ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছেন। 

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সন্টু ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি হার্টের রোগী। আমার এক রোগী ষষ্ঠ তলায় চিকিৎসাধীন। এসে দেখি লিফট বন্ধ হয়ে আছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর দম নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে রোগীর কাছে পৌঁছেছি।

শারমিন নামে এক নারী বলেন, পঞ্চম তলায় আমার নানি ভর্তি আছে। আমি নানিকে দেখশোনা করছি। দিনে খাবার, ওষুধসহ ১০-১২ বার নামতে হচ্ছে। আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামায় প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে। 

সোহেল নামে একজন বলেন, আমার বৃদ্ধ শাশুড়ির কয়েক দিন ধরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট। মঙ্গলবার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। চিকিৎসক চতুর্থ তলায় পাঠায়। একদিকে লিফট বন্ধ আবার ট্রলি না পাওয়ায় নিজেই শাশুড়িকে ঘাড়ে ও কোলে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে।

জহুরা খাতুন নামে আরও এক রোগীর স্বজন বলেন, আজ চার দিন ধরে হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় বোনকে নিয়ে আছি। শ্বাসকষ্টজনিত কারণে বোনের চিকিৎসা চলছে। দিনে ও রাতে বেশ কয়েকবার নিচে নামতে হচ্ছে। এমনিতেই আমার একটি পা ভাঙা থাকায় ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। লিফট বন্ধ থাকায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।  

এই ভবনের চিকিৎসক, স্টাফ ও স্বেচ্ছাসেবকরা বলেন, দায়িত্ব পালনকালে অসংখ্যবার বিভিন্ন ফ্লোরে যেতে হয়। এ সময় আমরা লিফট ব্যবহার করি। লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরাম বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। রোগী, স্বজন, চিকিৎসকসহ স্টাফদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ভবনের সপ্তম তলায় নির্মাণাধীন কাজ চলার কারণে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে লিফট অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বন্ধ হওয়ার পর থেকেই আমরা চেষ্টা করছি চালু করার জন্য। পানি শুকিয়ে গেলে দু'এক দিনের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। 

আফজালুল হক/এসপি