বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি

‘ভয়াল ২৫ মার্চ। সেই রাতেই চারদিক থেকে ভেসে আসে বন্দুকের গুলির আওয়াজ। কখনো পাকিস্তানি সৈন্যদের বুটের শব্দ, কখনো খবর আসে ‘মুক্তি’ সন্দেহে তরুণ যুবাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চারদিকের অস্থিরতা। ছড়িয়ে যায় ভয়। এরমধ্যে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলেন বাবা। কিন্তু ২৬ মার্চ সকালে বাবা-মা কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই।’

‘২৫ মার্চের গণহত্যা ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধার হত্যার নির্মমতার পর আর স্থির থাকতে পারলাম না। সেদিন রাতেই অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ছুটিপুর বর্ডার দিয়ে দেরাদুন চলে যাই। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে অস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শেষে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরি।’

এভাবে যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদককে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন বৃহত্তর যশোরের মুুজিব বাহিনী প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি।

অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঝিকরগাছার কায়েমকোলায় ২০/২৫ জন সহযোদ্ধা নিয়ে ঘাঁটি গড়ি। একসন্ধ্যায় সহযোদ্ধাদের নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। হঠাৎ সংবাদ আসে কায়েমকোলা বাজারস্থ গ্রামটি পাকবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা ঘিরে ফেলেছে। সাথে সাথেই সহযোদ্ধাদের পজিশন নিতে নির্দেশ দেই। এরপর শুরু হয় যুদ্ধ।

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হামিদসহ তিনজন। তুমুল যুদ্ধ চলছে। একপর্যায়ে স্থানীয় মুক্তিকামী জনতা যোগ দেয়। এরপর পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা পিছু হটে। এভাবে উত্তাল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জেলার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর প্রধান আলী হোসেন মনি ও উপ-প্রধান রবিউল আলমরা।

মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার নেপথ্যের ঘটনা

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ১৮ মিনিটের ভাষণ। যে ভাষণে তিনি পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে যশোরেও গড়ে তোলা হয় সংগ্রাম কমিটি। সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে সারাদেশের মতো যশোরেরও আপামর জনগণ আওয়ামী পতাকাতলে যোগ দেয়। স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে যশোরে প্রতিদিন মিছিল সমাবেশ চলত।

বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের পর স্বাধীনতাকামী যশোরবাসী পাকসেনাদের ঘাঁটি যশোর সেনানিবাসে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরমধ্যেই এলো ভয়াল ২৫ মার্চ। যেদিনে যশোর সেনানিবাস থেকে সেনাসদস্যরা শহরে ঢোকার সময় মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের চোরাগোপ্তা হামলার শিকার হয়। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণায় শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ।

সেই রাতেই ভেসে আসে বন্দুকের গুলির আওয়াজ। কখনো পাকিস্তানি সৈন্যদের বুটের শব্দে ছড়িয়ে যায় ভয়, কখনো খবর আসে ‘মুক্তি’ সন্দেহে তরুণ যুবাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চারদিকের অস্থিরতার মধ্যে যশোর সদরের রামনগরের কাজিপুরের কৃষক রফিউদ্দিন তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলেন।

কিন্তু ২৬ মার্চ সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় সদ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করা রফিউদ্দিনের বড় ছেলে প্রতিবাদী তরুণ আলী হোসেন মনি।

সে সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ওই দিন (২৬ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর গণপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মশিউর রহমানকে পাক বাহিনী যশোর শহরের সিভিল কোর্ট এলাকার বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। ২৫ মার্চ গণহত্যা ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধার হত্যার নির্মমতার পর আর স্থির থাকতে পারলেন না।

রাতেই শহরের আরবপুরের আবুল কবিরাজের বাড়িতে এমএনএ অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে নিয়ে ছুটিপুর বর্ডার দিয়ে বনগাঁয় দেরাদুনে চলে যাই। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে অস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া হয়। ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে। সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শেষে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফেরেন।

মনির যুদ্ধক্ষেত্র ও সেক্টর

ট্রেনিংয়ে ছিলেন রবিউল আলম, এজেডএম ফিরোজ, রাজেক আহমেদ, আবদুল হাই, খয়রাত হোসেন, মতিউর রহমান, মান্নান (প্রেস), আবদার, শাহ রফিকুজ্জামান। আরও ছিল আব্দুল মালেক, শেখ আবদুস সালাম, সমীর সিংহ রায়, আশরাফ চৌধুরী, ইকু চৌধুরী, মোফাজ্জেল হোসেন, সফিয়ারসহ আরও অনেকেই। ট্রেনিং শেষে বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফ) এর প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী হোসেন মনিকে। সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় রবিউল আলমকে।

এরপর দেরাদুন থেকে শিলিগুড়ি হয়ে কলকাতায় এসে ৮ নম্বর সেক্টরের তোফায়েল আহমেদের তত্ত্বাবধানে চলে আসি। তিনি আমাদের ভারতীয় সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেন। যশোরে এসে প্রত্যেক উপজেলা কমান্ডারের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।

শার্শায় মাবুদ, ঝিকরগাছায় আব্দুল হাই, সদরে (উত্তর) রবিউল, দক্ষিণে আমি, মণিরামপুরে খয়রাত হোসেন, কেশবপুরে শেখ আব্দুস সালাম, অভয়নগরে আব্দুল মালেক ও বাঘারপাড়ায় রাজেক আহমেদকে উপজেলা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এছাড়া মহেশপুরে এজেডএম ফিরোজ, নড়াইলে শরীফ হুমায়ুন, মাগুরায় আবুল খয়ের, শৈলকুপায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল হাইকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমান্ডাররা তার নিজ নিজ উপজেলায় তরুণদের সংগঠিত করে অস্ত্র ট্রেনিং দেয়। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আমাদের জিপটি যশোর শহরের মুড়লি মোড়ে পৌঁছলে সেখানে থাকা পাক আর্মি গুলি ছোড়ে।

জিপে থাকা আমার সহযোদ্ধা ওমর ফারুক শহীদ হন। সেদিন গাড়িতে থাকা আমার অপর দুই সহযোদ্ধা রবিউল আলম ও আব্দুল হাইসহ আমি গাড়ি থেকে লাফিয়ে ভৈরব নদী সাঁতরে পার হয়। পরে আমরা মণিরামপুর যায়। সেখান থেকে আমি আবার ভারতে যাই। 

সেখানে লেফটেন্যান্ট সালাউদ্দিন নামে এক বাঙালি অফিসারের কাছে আবার প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণ শেষে আমাকে শার্শার লক্ষ্মণপুরে এক রাজাকারের বাড়িতে অপারেশনের জন্য পাঠানো হয়। সাথে দেওয়া হয় ৪ সহযোদ্ধা। তাদের নিয়ে আমি ওই বাড়িতে গ্রেনেড হামলা চালাই। নিহত হয় এক রাজাকার। পরে যশোরে এসে একের পর এক অপারেশনের মাধ্যমে যশোরকে দখলদার মুক্ত করি।

রণাঙ্গনের রোমহর্ষক স্মৃতি : জগন্নাথপুরের যুদ্ধ

যশোরের রণাঙ্গনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি সংঘটিত হয় যশোরের চৌগাছার জগন্নাথপুর ও মসিয়ূর নগরে। ২০ নভেম্বর মুক্তি ও মিত্রবাহিনী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণার বয়রা সীমান্তপথে যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে। ঝিকরগাছার ছুটিপুর থেকে মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস লক্ষ্য করে কামানের গোলা নিক্ষেপ শুরু করে। সেনানিবাসকে অবরুদ্ধ করতে বয়রা-কাবিলপুর-গরিবপুর হয়ে এগোতে থাকে ট্যাংকবাহিনী।

এদিন ছিল ঈদের দিন। সকালে চৌগাছার জগন্নাথপুরের মানুষ তৈরি হচ্ছে ঈদ উদযাপনের জন্য। এমনই একসময় হানাদার পাকবাহিনীর ২০/২৫টি গাড়ি ঢুকে জগন্নাথপুর (বর্তমানে মুক্তিনগর) গ্রামে। ঈদের দিন মানুষ নামাজ পড়বে, মিষ্টিমুখ করবে। এটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাখির মতো লুটিয়ে পড়েছে মানুষ।

বর্বর পাঞ্জাবি সেনারা দেখামাত্রই গুলি চালাতে থাকে। একদিনেই তারা হত্যা করে ৩০ জনকে; যাদের সবাই নিরীহ, গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষ। সংসদ সদস্য মসিয়ূর রহমানের ভাই আতিয়ার রহমানসহ আরও দুজনকে পুড়িয়ে মারলেন ওই দানবরা। বাড়ির পর বাড়ি আগুন জ্বালিয়ে ছারখার করে দিল। অসহায় মানুষ তাদের প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিক পারল, পালাল।

সন্ধ্যায় ছদ্মবেশধারী চার মুক্তিযোদ্ধা এসে তাদেরও অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। বললেন, রাতে বড় ধরনের যুদ্ধ হবে। জনমানবশূন্য নীরব নিস্তব্ধ জগন্নাথপুর গ্রাম সহসাই প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোলাগুলির শব্দে। শুরু হয় ভয়ংকর যুদ্ধ। মসিয়ূর নগরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামও পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। ২১ ও ২২ নভেম্বর তাদের সঙ্গে পাক বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধ ছিল দুই পদাতিক বাহিনীর সর্বাত্মক লড়াই।

পদাতিক বাহিনীকে দ্রুত এগিয়ে যেতে পেছন থেকে গোলন্দাজ ও বিমান বাহিনী সহায়তা করে। এ যুদ্ধে পাক বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় হয়। পাকসেনারা দলে দলে খুলনার দিকে পালাতে থাকে। চৌগাছার এ যুদ্ধে পাকিস্তানের ১১টি পেটন ট্যাঙ্ক ও ৩টি শ্যাবর জেট বিমান ধ্বংস হয়। নিহত হয় অন্তত তিন শ পাকসেনা। চৌগাছা যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় পাক বাহিনীর বিপর্যয় ডেকে আনে। তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। রাজাকার-দালালরা পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ করে পালাতে থাকে। সৈন্যদের মনোবল চাঙা করতে ২২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার নিয়াজী যশোর ক্যান্টনমেন্ট সফর করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি।

৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত ও স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা

এর পর আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ ৬ ডিসেম্বর; পাকসেনাদের যশোর দুর্গের পতন। সেদিন সকালে ও দুপুরে দুই দফায় প্রচণ্ড লড়াই হয় ভারতীয় ৯ম পদাতিক ও ৪র্থ মাউন্টেন ডিভিশনের সাথে পাকিস্তানি ৯ম ডিভিশনের। সুরক্ষিত পাক দুর্গ বলে খ্যাত যশোর ক্যান্টনমেন্টে পর্যাপ্ত সৈন্য না থাকায় পাকিস্তানি সেনারা হতোদ্যম হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাতে থাকে। মুখোমুখি সে যুদ্ধে পাকসেনাদের অবস্থান ছিল যশোর ক্যান্টনমেন্টের ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে আফরায়।

বাংলাদেশের ৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে গরিবপুরে মিত্র বাহিনী অবস্থান নেয়। সীমান্তের ওপারে বয়রা থেকে দূরপাল্লার কামানের শেল এসে পড়ে যশোর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানঘাঁটিতে। আফরার প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ায় পাকসেনাদের পালানো ছাড়া উপায় থাকে না। হৈবতপুর এবং আশপাশের গ্রামের মুক্তিকামী মানুষ পাকসেনাদের হত্যা করতে থাকে। এই যুদ্ধে ভারতীয় অন্তত এক শ যোদ্ধা শহীদ হন। নিহত হয় বিপুলসংখ্যক পাকসেনা।

শেষ পর্যন্ত পাক বাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে খুলনায় পালিয়ে যায়। এভাবেই পতন ঘটে যশোর দুর্গের। ৬ ডিসেম্বর পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস হয়ে যায় যশোর। এরপর ১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত যশোরের টাউন হল ময়দানে বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’ সেদিন তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এমআর আকতার মুকুল ও জহির রায়হান প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা ও রোমাঞ্চকর স্মৃতি

দেশ স্বাধীনের পর সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা যশোরে অস্ত্র জমা দিলেও মুজিব বাহিনীর সদস্যরা ঢাকায় বঙ্গন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন। ঢাকা স্টেডিয়ামে তার পায়ের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আসি; আর বঙ্গবন্ধুকে বলে আসি, আবার অস্ত্র ধরা লাগলে ডাক দেবেন; ঝাঁপিয়ে পড়ব। তারপর বাড়ি ফিরে গ্রামে যায়।

বাড়িতে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আমি বাড়ি যাওয়ার পরে শত শত লোক আমাকে দেখতে আসে। পরিবারের লোকজন আমাকে বলতে থাকে আমি যুদ্ধে যাওয়ায় রাজাকাররা আমার পরিবারের সাথে করা নানান নির্যাতনের কথা। এলাকাবাসী শুনতে চাই যুদ্ধের মাঠে রোমহর্ষক স্মৃতির গল্প। তারপর আমাকে মা বিভিন্ন খাবার রান্না করে খাওয়ায়।  

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা ও প্রাপ্তি স্বীকার

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা। আলী হোসেন মনি ব্যথিত হন যখন শোনেন নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধার নাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের শাসনভার নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়েছেন। সরকার আমাদের ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা দেয়। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা ভালো রয়েছেন বলে জানান তিনি।

তবে আর একটু সুযোগসুবিধা বাড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি। যশোর প্রথম স্বাধীন জেলা, সেই সাথে দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলাও। ঐতিহাসিক এই জেলায় সরকার যদি আর একটু উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিত, তাহলে প্রতিটি সেক্টরেই উন্নয়ন হতো। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা নেই। এখনকার রাজনীতিবিদদের ছেলে-মেয়েরাই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার করোনাকালে আমাদের ভাতা বাড়িয়েছে। গৃহহীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

আলী হোসেন মনি ১৯৪৭ সালের ১৭ জানুয়ারি যশোর সদর উপজেলার কাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত রফিউদ্দিন ও মাতা মৃত মনোয়ারা বেগম। কৃষক পরিবারে তিন ভাই-বোনের মধ্যে আলী হোসেন মনি ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি শহরের রেলস্টেশন এলাকায় বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে যশোরের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও মেয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করছেন।

এমএসআর