নষ্ট হয়ে যাওয়া হালি চারা দেখছেন এক কৃষক

ঘন কুয়াশার অতিরিক্ত শীত ও পোকার আক্রমণে মৌলভীবাজারে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের হালি চারা। সদ্য লাগানো বীজতলায় হঠাৎ ছোট ছোট সাদা পোকা আক্রমণ করে। ১০ থেকে ১৫ দিন বয়সী চারাগুলো সাদা ও লালচে রং ধরে মরে যাচ্ছে। বারবার কীটনাশক ব্যবহার করে কোনো লাভ হচ্ছে না। চাষাবাদের শুরুতেই এই বিপর্যয় রোধ না হলে বাধাগ্রস্ত হবে বোরো চাষ। এমন আশঙ্কা করছেন মৌলভীবাজারের কাওয়াদীঘি হাওরপারের বোরোচাষিরা।

নানা জাতের ওষুধ দিচ্ছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এই এলাকায় বছরে একবারই বোরো খেত হয়। এখন একবারেই যদি ফসল না হয়, তাহলে এই এলাকার কৃষকরা এখন কী করবে?

কৃষক আব্দুল আজিজ

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে বিপিএইচ বা বাদামি ঘাসফড়িং স্থানীয় নাম কারেন্ট পোকা খাদ্যের অভাবে বোরো ফসলের বীজতলায় আক্রমণ করেছে। এদিকে বিরূপ আবহাওয়ায় পোকার বংশবিস্তারও বাড়ছে। বাদামি ঘাসফড়িং চারা গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে হালি চারা নষ্ট করছে। তবে এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাওর কাওয়াদীঘি এলাকায় ৬৪০ হেক্টর বীজতলার মধ্যে এ পর্যন্ত ২ হেক্টর বীজতলার হালি চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জমির পানি বের করে কীটনাশক পাইটাফ, পাইরাজিন, প্লেনাম পরিমাণমতো প্রয়োগ করার জন্য।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, হাওর কাওয়াদীঘি এলাকার বাগের বাড়ি, চালবন্দ, মেদেনীমহল, সোনাটিকি, ধুলিজোড়া, বেতাহুঞ্জা এলাকার ১০ হেক্টর হালিচারা নষ্ট হয়েছে। এলাকার বাজারগুলোতে কীটনাশকের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে দ্বিগুণ দামে কীটনাশক বিক্রি করছে। কয়েকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও লাভ হয়নি।

নষ্ট হয়ে গেছে এসব হালি চারা

কুরছিরবন্দ এলাকার কৃষক মুসা মিয়া বলেন, তার ১৬ শতক বীজতলায় সরকারি ডিলারের কাছ থেকে হাইব্রিড হীরা জাতের বীজ এনে হালি চারা বুনন করেছিলেন। এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। কীটনাশক দিয়ে কাজ হচ্ছে না।

ধুলিজোড়া গ্রামের রিপন মিয়া বলেন, হাওরের পদ্মারবন্দ নামক স্থানে তার ৯ শতক বীজতলায় চারা বুনেছিলেন তিনি। কয়েকবার কীটনাশক দিয়েছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। বাজারে কীটনাশকের দাম বেড়ে গেছে। ৫০ টাকার কীটনাশক ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারা যেন বীজতলায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ না করে। জমির পানি বের করে কীটনাশক পাইটাফ, পাইরাজিন, প্লেনাম পরিমাণমতো প্রয়োগ করলে পোকা চলে যাবে। এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা আর অতিরিক্ত ঠান্ডায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে

মো. এনামুল হক, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা

কেওলা গ্রামের বরকত মিয়া বলেন, হাওরের মেঘলিয়া বন্দে ১৫ শতক বীজতলা এখন বাদামি রং ধারণ করেছে। বারবার কীটনাশক দিয়েও কোনো সুফল আসছে না। বীজতলা আবার চাষ দিয়ে নতুন করে বীজ বপন করতে হবে। এতে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হবে।

কাউয়াদিঘি হাওরের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, নানা জাতের ওষুধ দিচ্ছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এই এলাকায় বছরে একবারই বোরো খেত হয়। এখন একবারেই যদি ফসল না হয়, তাহলে এই এলাকার কৃষকরা এখন কী করবে?

রাজনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারা যেন বীজতলায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ না করে। জমির পানি বের করে কীটনাশক পাইটাফ, পাইরাজিন, প্লেনাম পরিমাণমতো প্রয়োগ করলে পোকা চলে যাবে। এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা আর অতিরিক্ত ঠান্ডায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমন কাটার পরপর বাদামি ঘাসফড়িং খাদ্যের অভাবে হালি চারায় আক্রমণ করেছে। কাওয়াদীঘি হাওর এলাকায় ৬৪০ হেক্টর বীজলার মধ্যে ২ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে কীটনাশক প্রয়োগে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এনএ