কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল
এবার রোগীদের ওপর ধসে পড়ল ছাদের ঢালাই
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ছাদ ধসের ঘটনা ঘটেছে। ছাদের ঢালাই, সিলিং বোর্ড ও পলেস্তারা খসে পড়ে কয়েকজন রোগীসহ স্বজনরা আহত হয়েছেন। ছাদ ধসের পর রোগীদের অন্যান্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই ওয়ার্ড ১৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেন।
বিজ্ঞাপন
সিসিইউ ওয়ার্ডের ৬ নম্বর শয্যার রোগী শফিকুল ইসলাম বলেন, হার্টের সমস্যা নিয়ে গতকাল ভর্তি হই হাসপাতালে। দুপুর ১টা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের দিকে হাঠাৎ করে ধসে পড়ে। পুরো ওয়ার্ডে রোগী ছিল। সিলিং ও পলেস্তারার টুকরা খসে পড়ে অনেকেই আঘাত পেয়েছে। আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর থেকে খুবই ভয় লাগছে। ওপরের দিকে চোখ রেখে শয্যায় অপেক্ষা করছি অন্য ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য। অন্য রোগীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলে গেছে, আমিও যাব। কেননা এখনো কিছু ঢালাই ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় খসে পড়তে পারে।
বিজ্ঞাপন
রোগীর স্বজন বানু জানান, অনেক জোরে শব্দ হয় এবং ছাদ ধসে পড়ে। চিকিৎসাধীন রোগীর শয্যার উপর পলেস্তারা ও সিলিং বোর্ড খসে পড়ে। সেগুলো রোগী ও স্বজনদের শরীরেও পড়ে। এতে রোগী ও রোগীর স্বজনরা চিৎকার শুরু করে। কয়েকজন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছে।
রোগীর স্বজন মেহেদী হাসান কোমল, চার দিন আগে থেকে আমার মা কোহিনূরকে নিয়ে ভর্তি হয়েছি। সব সময় অক্সিজেন সাপোর্টে ছিল মা। কয়েকদিন আগে থেকেই এই সমস্যা ছিল। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও অবহেলার কারণে আজ এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহ সহায় ছিল বলে কেউ গুরুতর আঘাত পায়নি।
চিকিৎসাধীন রোগী অজয় বোস ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন আগে সিসিইউ ওয়ার্ডের তিন নম্বর শয্যায় ভর্তি হয়েছি। শয্যায় শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে ছাদ ধসে পড়ে আমার এবং আশেপাশের বেডের ওপর। সিলিং বোর্ড ও পলেস্তারার আঘাতে আমার মাথা-পায়ে লেগেছে। আমার খালাতো বোন কল্পনা বিশ্বাসের মাথায় পড়েছে। সেও আহত হন, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সিসিইউ ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাসিমুল বারী বাপ্পী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরাতন ভবন হওয়ায় ছাদ ধসে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা বিষয়টি সরেজমিনে এসে দেখেছেন। তারা শনিবার থেকে কাজ শুরু করবেন। সিসিইউ ওয়ার্ডের রোগীদের তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।
সিসিইউ ওয়ার্ডের একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১টা ১০মিনিটের দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। আমি তখন ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সাথে সাথে ওয়ার্ডের ভেতরে গিয়ে দেখতে পায় ছাদের পলেস্তারা ও সিলিং খসে পড়েছে রোগীর শয্যায়। পলেস্তারা খসে পড়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সমস্যা বহু দিনের। কয়েকমাস আগেও ছাদের পলেস্তারা ও সিলিং খসে পড়েছিল। সে সময় চিকিৎসক ও নার্স আহত হয়েছিলেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাদ ধসের ঘটনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ওই কার্যালয় সংস্কার করা হবে। ওই ওয়ার্ডের রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। ছাদ ধসের ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হননি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ মার্চ সন্ধ্যায় সিসিইউ ওয়ার্ডের নার্সদের রুমেও ছাদের অর্ধেক ঢালাই ও পলেস্তারা ধসের ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয়তলায় ১৬ শয্যার করোনারি কেয়ার ইউনিট। ইউনিটের প্রবেশমুখে নার্সদের কার্যালয়। সেখানে চিকিৎসক ও নার্সরা কাজ করেন। সেই দুর্ঘটনায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্স আহত হয়েছিলেন।
রাজু আহমেদ/এমএসআর