মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে ভাড়া বাসায় গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে নিহত শান্তা খানমের (২৭) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বয়লা এলাকার নিজ বাড়ির পাশের মসজিদ-সংলগ্ন গোরস্তানে স্বামী ও ছেলে-মেয়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। পরপর একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

ঘটনার ৭ দিন পর আজ সকালে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শান্তা খানমের মৃত্যু হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শান্তা খানমের দুই শিশু সন্তান ইয়াছিন খান (৫) ও ফাতেমা নোহরা খানমের (৩) মৃত্যু হয়। পরে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে শান্তার স্বামী কাউসার খানেরও মৃত্যু হয়।

শান্তা খানমের স্বামী কাউসার খান কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের বয়লা খান বাড়ির বাসিন্দা আব্দুস সালাম খানের ছেলে। তিনি মুন্সিগঞ্জে আবুল খায়ের গ্রুপে ওয়েল্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের বয়লা খান বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের লোকজন ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। এলাকাবাসী একের পর এক আসছেন তাদের খোঁজখবর নিতে। 

এলাকাবাসী বলছেন, এমন ঘটনা তারা কখনো দেখেননি। গত শুক্রবার দুই শিশুর মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাদের বাবা কাউসার খানের মরদেহ শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে আনা হয়। জানাজা শেষে ছেলে ইয়াছিন খান ও মেয়ে নোহরা খানমের কবরের পাশে বাবা কাউসার খানের মরদেহ দাফন করা হয়। আজ শান্তা খানমের মরদেহ বিকেলে বাড়িতে আসলে আবার শুরু হয় স্বজনদের কান্না আর আহাজারি।

নিহত কাউসার খানের বড় ভাই আব্দুল কাইয়ুম খান জানান, চাকরির সুবাদে ১০ বছর ধরে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত কাউসার। সে আবুল খায়ের গ্রুপে রিভার ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করত। কীভাবে কী হয়েছে আমরা এখনো সঠিক জানতে পারিনি। আমাদের পরিবারটি ধ্বংস হয়ে গেল। 

প্রসঙ্গত, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকার একটি তিনতলা বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকতেন কাউসার খান। গত বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কাউসারের ফ্ল্যাটে বিকট শব্দ হয়। এ শব্দে আশপাশের মানুষ ভয়ে আঁতকে ওঠেন। ঘরের জানালা ভেঙে যায়। ওই সময় কাউসারের ঘরের সবাই চিৎকার করছিলেন। পরে লোকজন বের হয়ে দেখতে পান, কাউসারের ফ্ল্যাটে আগুন জ্বলছে। তখন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসার আগেই প্রতিবেশীরা পানি দিয়ে আগুন নেভান। চারজনকে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়। 

এসকে রাসেল/আরএআর/জেএস