‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আমাদের কাছে গ্রীন সিগন্যাল বলে মনে হলো। ওই দিন আমি নিজেও রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলাম। ২৬ মার্চ আমি লৌহজং এসে থানা থেকে দুটি রাইফেল নিয়ে যুবকদের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করি। ১৪ এপ্রিল পদ্মার চরে গিয়ে রাইফেল ফায়ারিং শুরু করি। আগস্ট মাসে ভারতের মেঘালয় সেক্টর-২ এ যাই। পরে ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর এম এ জলিল আমাকে ফরিদপুরে পাঠান যুদ্ধ করতে।’

মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা স্মৃতি নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পাঁচ নম্বর আসামি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ৯ নম্বর সাব সেক্টরের (বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল) কমান্ডার ছিলেন। ফরিদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার তিনি। শহরের নিজ বাসায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নানা বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের এই প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি আলাপ করেন। সেখানে তিনি যুদ্ধকালীন নানা  ঘটনা ও স্মৃতি তুলে ধরেন।

পারিবারিক পরিচিতি

নূর মোহাম্মাদের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেরার কুমারভুক গ্রামে। তার বাবা মরহুম আলহাজ তমিজউদ্দিন, মা মরহুম রাবেয়া খাতুন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
মা রাবেয়া খাতুনকে হারিয়েছেন ৭-৮ বছর বয়সে। ১৯৭২ সালে হজ করে ফেরার পথে জাহাজে মারা যান বাবা তমিজউদ্দিন। তার মরদেহ বাক্সে ভরে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

নূর মোহাম্মাদ বিবাহিত এবং চার মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি মারা যান তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। মেয়ে সুলতানা পারভীনের বিয়ে হয়েছিল ফরিদপুর সদরের কোমরপুরে। তিনি মারা গেছেন। বাকি তিন মেয়ে বেঁচে আছেন। তারা হলেন- নাজনীন, কোহিনূর ও নাসরিন। একমাত্র ছেলে নাজমুল মোর্শেদ মাসুদ ব্যবসা করেন।

নৌবাহিনীতে যোগদান

১৯৪২-৪৩ সালে কাপড়ের ব্যবসার সূত্রে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফরিদপুরে চলে আসেন নূর মোহাম্মাদের বাবা তমিজউদ্দিন। নূর মোহাম্মদ ভর্তি হন ফরিদপুরের হিতৈষী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৫২ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় যোগ দেন নৌ-বাহিনীতে। চলে যান করাচি। ‘জয়েন দ্য নেভি, সি দ্য ওয়াল্ড’-এই স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নৌবাহিনীতে যোগদান করেন। এ ব্যাপারে বাবার অনুমোদন ছিল। নেভিতে যোগ দিয়েও পড়াশুনা চালিয়ে যান তিনি।  ১৯৫৪ সালে মেট্রিক পাস করেন। পরে আর পড়াশোনা করেননি। বাংলা ভাষার পাশাপাশি তিনি উর্দু ও পাঞ্জাবি ভাষা শেখেন।

পাকিস্তানিদের বঞ্চনা

করাচির পিএমএস বাহাদুর নামে নৌবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে নূর মোহাম্মদ দেখেন পাকিস্তানিরা বাঙালি বলে তাদের হেয় জ্ঞান করেন। কথায় কথায় কটাক্ষ করে বলতেন ‘শালা বাঙালি, হিন্দুর জাত’।
পিএমএস বাহাদুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শেষ করে জাহাজে ওঠেন। জাহাজে কিছু দিন চাকরি করেন। এরপর চাকরি শেষ করে আবার ট্রেনিংয়ে অংশ নেন। গেরিলা ট্রেনিংসহ বিভিন্ন ট্রেনিং। তিনি ইরান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। মিয়ানমারের রেঙ্গুনে শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের কবর জিয়ারত করেছেন।

নৌবাহিনীতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানিদের শোষণের কথা জানতে পারেন বাঙালিদের প্রতি। তখন জাতীয় বাজেটের ৭৫ ভাগ বরাদ্দ হতো সেনাবাহিনীর পেছনে। এর মাত্র ৩৭ ভাগ পয়সা বরাদ্দ দেওয়া হতো পূর্ব পাকিস্তানের জন্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ

নৌবাহিনীতে থাকা অবস্থায় ১৯৬২ সালে ছাউনির গেরিলা ইউনিটের বাঙালিরা উপলব্ধি করেন স্বশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে হবে। দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে আর থাকা যায় না। বাঙালিরা উৎপাদন করবে পাকিস্তানিরা ভোগ করবে- এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। করাচির পিএন হিমালয় ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে বাঙালিদের নেতৃত্ব দিতেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, সুলতানউদ্দিন আহমেদ, নূর মোহাম্মদ, স্টুয়ার্ড মজিবর রহমান, হাবিলদার আজিজ ও হাবিলদার দবিরউদ্দিন।

১৯৬৪ সালে তারা সিদ্ধান্ত নেন তাদের একক প্রচেষ্টায় কিছুই করা যাবে না। সঙ্গে একজন রাজনৈতিক নেতা প্রয়োজন। তাদের মাথায় মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের নাম আসে। এরই মধ্যে তারা জানতে পারেন শেখ মুজিব করাচি আসবেন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে আখতার সলেমানের করাচির লাকমো হাউসে থাকবেন। একদিন বিকেলে লে. কর্নেল মোয়াজ্জেম, সুলতানউদ্দিন, নূর মোহাম্মদ, স্টুয়ার্ড মজিবর আখতার সলেমানের বাড়িতে গিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করেন।

নূর মোহাম্মদ বলেন, আমরা শেখ মুজিবকে বলি, ‘আমরা চাই পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান এককভাবে চলুক।’ শেখ মুজিব আমাদের জড়িয়ে ধরলেন। আবেগঘন কণ্ঠে বললেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমার জীবনের শেষ রক্ত দিয়ে আপনাদের সব প্রকার সহযোগিতা করব।’

এরপর আমরা সবাই কোড নাম ব্যবহার শুরু করি। শেখ মুজিবের কোড নাম হয় ‘পরশ’, মোজাম্মেলের ‘আলো’, সুলতানউদ্দিনের ‘কামাল’, নূর মোহাম্মদের ‘সবুজ’, সিএসপি আহমেদ ফজলুর ‘তুষার’, স্টুয়ার্ড মজিবের ‘মুরাদ’,  আমীর হোসেনের নাম হয় ‘উল্কা’। পরে পাঁচজনকে নিয়ে সুপ্রিম কমান্ড কাউন্সিল গঠন করা হয়।

এই গ্রুপের সঙ্গে ১৯৬৫ সালে ঢাকায় তাজউদ্দিন আহমেদের বাসায়  সভা হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় এই অঞ্চলের লোকদের ধারণা হয় আমরা অরক্ষিত।  এ প্রেক্ষাপটে ১৯৬৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সর্বদলীয় সভায় ৬ দফা স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব পেশ করেন শেখ মুজিব। এ প্রস্তাবে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা দুই ভাগ হয়ে যান। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা বলা শুরু করেন আজ থেকে পাকিস্তান দুই ভাগ হয়ে গেল। আইউব খান বলেন, ‘সিক্স পয়েন্ট ইজ নাথিং ল্যাঙ্গুয়েজ অব উইপেন’।

নূর মোহাম্মদ বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবের সঙ্গে মোয়াজ্জেমের করাচির বাড়িতে গোপন সভা হয়। আমি ওই সভায় যোগ দেই। আলাপ হয় নতুন লোক রিক্রুটমেন্টের। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয় আরব সাগর তীরে মনরা আইল্যান্ডে। শেখ মুজিবের কাছে আগ্রগতি তুলে ধরা হয়। আমরা শেখ মুজিবকে বলি, ‘আপনি যে কোনো সময় গ্রেফতার হয়ে যাবেন। গ্রেফতার হওয়ার পর আপনার নির্দেশনা কার মাধ্যমে পাব সে রকম একজন ঠিক করে দেন। শেখ মুজিব চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মানিক চৌধুরীর কথা বলেন। তিনি বলেন, উনি যোগাযোগ করবেন তোমাদের সঙ্গে আমার বার্তা পৌঁছে দিতে।

১৯৬৬ সালের জুন মাস থেকে শেখ মুজিব খুলনা থেকে ছয় দফার পক্ষে জনমত গঠনের জন্য সফর শুরু করেন। পরে যশোরে সভার পর শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬৭ সালের ৯ ডিসেম্বর আমীর হোসেন (উল্কা) বিশ্বাসঘাতকতা করেন। এরপর থেকে একে একে আমাদের গ্রেফতার করা হয়। আমির হোসেন নিজেও গ্রেফতার হন। এর আগে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি ১৯ তারিখে শেখ মুজিবকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে জেল গেট থেকে তাকে সেনাবাহিনী আটক করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। 

রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য

১৯ জুন ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা শুরু হয়। এতে শেখ মুজিবকে প্রধান করে ৩৫ জনকে আসামি করা হয় এবং ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়। সেনানিবাসে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে এ বিচার হয়।

এই মামলার সঙ্গে আগরতলার কোনো সম্পর্ক নেই। শেখ মুজিব আগে কখনও আগরতলায় গিয়েছিলেন কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমরা নৌবাহিনীর সদস্যরা বাঙালির মুক্তির যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম সে সময়কালে শেখ মুজিব কখনও আগরতলায় যাননি। আসলে ভারত বিদ্বেষের অংশ হিসেবে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলতে সংবাদ মাধ্যমের সহায়তায় আগরতলার নাম ব্যবহার করে পাকিস্তান সরকার।
ইতোমধ্যে এ ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে ফুঁসে ওঠে দেশবাসী। এ মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে গণআন্দোলন শুরু হয়। নেতৃত্ব দেয় দেশের ছাত্রসমাজ।

মামলা থেকে অব্যহতি

১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ক্যান্টনমেন্টে গুলিতে নিহত হন সার্জেন্ট জহুরুল হক। ভোরে বাথরুমে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় তাকে গুলি করা হয়। সার্জেন্ট জহুরুলের মরদেহ নিয়ে ঢাকায় মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ সামাল দিতে পাকিস্তান সরকার ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে ২২ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মুক্তি দেন। মুক্ত হই শেখ মুজিবসহ আমরা সবাই।

মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আমাদের কাছে গ্রীন সিগন্যাল বলে মনে হলো। ওই দিন আমি নিজে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলাম। ২৬ মার্চ লৌহজং এসে থানা থেকে দুটি রাইফেল নিয়ে যুবকদের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করি। ১৪ এপ্রিল পদ্মার চরে গিয়ে রাইফেল ফায়ারিং শুরু করি। আগস্ট মাসে ভারতের মেঘালয় সেক্টর-২ এ যাই। পরে ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর এম এ জলিল আমাকে ফরিদপুরে পাঠান যুদ্ধ করতে। প্রায় এক হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বগদা বর্ডার হয়ে দেশে প্রবেশ করি। কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের সদর দফতর স্থাপন করে কর্মকাণ্ড শুরু করি। 

নূর মোহাম্মদ ও তার বাহিনী ৩ অক্টোবর ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস সেন্টারে হামলা চালিয়ে তা দখল করেন। এতে ১৯ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ১০ অক্টোবর শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করেন। ১৪ অক্টোবর ডামুডা যুদ্ধে জয়ন্তী নদীর পাড়ে ছয় ঘণ্টা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এ যুদ্ধে ৬৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। শাহাদাত বরণ করেন ৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

২৭ নভেম্বর টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা ও মায়ের সঙ্গে দেখা করেন নূর মোহাম্মদ। ৩০ নভেম্বর হেমায়েত বাহিনীর সঙ্গে কোটালিপাড়া মুক্ত করেন। ৬ ডিসেম্বর বিনা যুদ্ধে গোপালগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করেন। পরে সিদ্ধান্ত নেন ফরিদপুর মুক্ত করার। ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুরে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

আনন্দময় ঘটনা

নূর মোহাম্মদের সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনা ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। যেদিন ষড়যন্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি পান। জেল থেকে মুক্ত হন।

লোমহর্ষক  স্মৃতি

নূর মোহাম্মদের কাছে তার জীবনের একটি দুঃখের স্মৃতির কথা জানতে চাইলে আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন তিনি। বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ভেদরগঞ্জ যুদ্ধে শহীদ হন তার সহযোদ্ধা সর্দার মহিউদ্দিন। যুদ্ধের পর মহিউদ্দিনের মরদেহ নিয়ে তিনিসহ কয়েকজন যোদ্ধা যান মহিউদ্দিনের বাড়িতে। বাড়ির আঙিনায় মহিউদ্দিনের মরদেহ রাখা হয়। মরদেহ দেখে তার ছোট একটি বাচ্চা বার বার বাবার বুকে ঝঁপিয়ে পড়ে বলতে শুরু করে, ‘বাবা তোমার কী হয়েছে, তুমি চোখ মেলছো না কেন।’ 

নূর মোহাম্মদ বলেন, ওই অবুঝ শিশুটিকে আমি সান্ত্বনা দিতে পারিনি। শিশুটি জানেও না কি অমূল্য ধন সে হারিয়েছে। কিন্তু আজো ওই শিশুটির করুণ আকুতি, মুখের ছবি অভিব্যক্তি আমার মগজে ঘা মারে। ঘুমের মধ্যে আজও জেগে উঠি।

সরকারের প্রতি প্রাপ্তি স্বীকার

নূর মোহাম্মদ বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের অনেক সম্মান দিয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে ২০ হাজার টাকা ভাতা করেছে। আসলে কিছু পাব বলে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। পাওয়ার আশা করে যুদ্ধ করিনি। দেশকে ভালোবেসেই স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমার আজও মনে আছে আমার স্ত্রীও আমাকে যুদ্ধে যেতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। আমাকে সেদিন পেছনে ডাকেননি।

আক্ষেপ

যে লক্ষে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দিয়েছিলেন এবং মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পর সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা সন্নিবেশ করেছিলেন তা আজ ভূলুণ্ঠিত। বাংলাদেশ আজ দুর্নীতিতে ভাসছে। দেশের এক শ্রেণির মানুষ লুটপাট ও সম্পদের পাহার গড়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দুঃখ বেদনা নিয়েই একদিন আমাকে চির বিদায় নিতে হবে।

শেষ স্বপ্ন

ফরিদপুর শহরের এক নম্বর গোয়ালচামট মহল্লার বাড়িতে বসবাস করেন নূর মোহাম্মদ। নিজের প্রচেষ্টায় তিনি সে বাড়ির দোতালার একটি কক্ষে গড়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর। এ জাদুঘরে তার নিজেরসহ বহু মুক্তিযোদ্ধার দুর্লভ ছবি রয়েছে। রয়েছে ওই সময় জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকদের ছবি।

নূর মোহাম্মদ জানান, তার বয়স হয়েছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগে। এ শরীর নিয়ে আর বেশিদিন হয়তো তিনি বাঁচবেন না। তাই তার সংগ্রহশালাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি তার হাতে গড়া জাদুঘরটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে স্থনান্তর করে যেতে চান।

ফরিদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফরিদপুরে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা মোট ৪৩৮ জন। জেলায় ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন ৪৩৮ জন।

আরএআর