কক্সবাজারের রামুর পেঁচারদ্বীপ এলাকার অপহৃত চার স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদেরকে অপহরণ করে টেকনাফের গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায় দুই রোহিঙ্গা। ঘটনার তিন দিন পর শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় টেকনাফের শালবাগান পাহাড়ি এলাকায় র‌্যাব ও এপিবিএন যৌথ অভিযান চালিয়ে তিন স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোরে আরেক স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করে র‍্যাব। 

উদ্ধার ছাত্ররা হচ্ছে- রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেচারদ্বীপের মংলাপাড়া এলাকার মোহাম্মদ কায়সার, মিজানুর রহমান নয়ন, জাহিদুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে চার স্কুলছাত্রকে গহীন পাহাড়ে তিন দিন আটকে রেখে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে রোহিঙ্গারা। নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্ররা ফিরে এসে নির্যাতনের কথা জানিয়েছে। 

ওই চার স্কুলছাত্র জানায়, ৭ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিমের সঙ্গে তারা টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেখানে পৌঁছানোর পর খাওয়া-দাওয়া করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ওঠার পর তাদের একটা বাগানে নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিম। বাগানে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মুখোশ পরা ৮-১০ জন লোক আসে। সেখান থেকে তাদের তুলে নেওয়ার পর পরই চোখ বেঁধে ফেলা হয়। মুখসহ পুরো মাথায় মুখোশ পরিয়ে দেয় তারা। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। কয়েকটি স্থান পরিবর্তন করে অপহরণের পরপরই তাদেরকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। দুইদিন আমাদের হাত ও চোখ বেঁধে মুখোশ পরিয়ে রাখে তারা।

উদ্ধার হওয়া মিজানুর রহমান নয়ন বলে, আমার বাসার পাশের কটেজের জাহাঙ্গীরের সঙ্গে অল্প দিনের পরিচয়। এর মধ্যে পরিকল্পনা হয় আমরা সেন্ট মার্টিন যাব। সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য আমরা টেকনাফের একটি হোটেলে আবস্থান করি। পরদিন ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাদের একটি বাগানে নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিম। কয়েকজন লোক এসে আমাদের জোর করে বাগানের ভেতর নিয়ে যায়। এরপরই বাগানের ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা আমাদের চোখ বেঁধে মুখোশ পরিয়ে দেয়। এর আধা ঘণ্টা পর অন্য আরেকটি জায়গায় নিয়ে যায় আমাকে। কয়েকটি স্থান বদল করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায়ই রাখা হয়।

কয়েকটি স্থানে তাদের রাখা হলেও স্থানগুলোর বর্ণনা দিতে পারেননি তারা। চোখ বাঁধা থাকার কারণে স্থানগুলো চিহ্নিত করতে পারেননি বলে জানান তারা।

অপহৃত হওয়ার তিন দিন পর মুক্তি পেয়ে শনিবার  সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে মৃদুল অপহরণিত চার স্কুল ছাত্র  মুক্তি বিষয়ে বর্ণনা দেন।  

অছাত্রদের উদ্ধারে হ্নীলা থেকে টেকনাফের নয়াপাডা, শালবাগান ও লেদা পর্যন্ত ফাঁদ পেতে বসে র‌্যাবের আভিযানিক দল। তারপর নয়াপাড়া ক্যাম্পে মুক্তিপণ নিতে আসা অপহরণকারী একজন আটকে যায় র‌্যাবের জালে। তার সূত্র ধরে উদ্ধার হয় কায়সার ও মিজানুর রহমান নয়ন। তারপর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) জাহেদকে ও মিজানকে র‌্যাব উদ্ধার করে।

র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল খাইরুল আমিন সরকার বলেন, উদ্ধার হওয়া কায়সার ও নয়ন জানিয়েছেন তাদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ক্যাম্পের গহীন পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। তারপর মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন শুরু করে। র‌্যাবের টিম কৌশল অবলম্বন করে অক্ষত আবস্থায় তাদের উদ্ধার করে। তাদেরকে কোনো মুক্তিপণ দিতে হয়নি।

আরএআর