মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করে সংসার চলে তাদের
উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। জেলার সদর উপজেলার ২৫০-৩০০ যুবকের আয়ের একমাত্র ভরসা মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করে চলছে তাদের সংসার।
জানা গেছে, সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলচালকরা সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের জালালের মোড় ও শুলকুর বাজার নামক স্থানে জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছে চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। দূরত্ব অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেন। এতে তাদের একেকজনের সারা দিনে আয় হয় ৫০০-৮০০ টাকা। তেল খরচ বাবদ ব্যয় হয় ২০০-২৫০ টাকা। অবশিষ্ট টাকা দিয়েই চলে সংসার তাদের।
বিজ্ঞাপন
পাঁচগাছীর সিতাইঝাড় এলাকার মোটরসাইকেল চালক নুর আলম জানান, আমরা ২৫০ জনের বেশি মোটরসাইকেল চালক প্রতিদিন জালালের মোড় থেকে যাত্রী বহন করে মোল্লারহাট হয়ে উলিপুর উপজেলার কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে যাই। আমাদের এই রাস্তা দিয়ে অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তাই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা যাত্রীদের মোটরসাইকেলে বহন করে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার চালাই।
বিজ্ঞাপন
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জের মোটরসাইকেলচালক ফারুক জানান, আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অটোসহ অন্য যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারে না। আমরা মোটরসাইকেল চালকরা জালালের মোড় থেকে মোল্লারহাট, কালীগঞ্জ, ওয়াপদা বাজার, নয়ারহাটসহ চৌমুহনী বাজার এলাকা পর্যন্ত মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করি।
মোল্লারহাট কড্ডার মোড় এলাকার মোটরসাইকেলচালক আব্দুর রহিম জানান, আমাদের এলাকার পাশ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী বয়ে গেছে। বন্যায় প্রতি বছর রাস্তা-ঘাট ভেঙে যায়। এখানকার অধিকাংশ রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী। তাই মোটরসাইকেল ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল সম্ভব হয় না। তাই মোটরসাইকেল কিনেছি। তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। এতে আমাদের সারা দিনে আয় হয় ৫০০-৮০০ টাকা। তেল বাবদ খরচ হয় ২০০-২৫০ টাকা। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে সংসার চালাই।
গারুহারা এলাকার যাত্রী মঞ্জু মিয়া জানান, আমার বাড়ি গারুহারা এলাকায়। আমি গারুহারা থেকে নিয়মিত কুড়িগ্রাম শহরে যাতায়াত করি। এই রাস্তা দিয়ে অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পারায় আমরা মোটরসাইকেলে যাত্রী হয়ে যাতায়াত করি। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। স্বল্প আয় দিয়ে মোটরসাইকেলের ভাড়া বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।
নয়ারহাট এলাকার যাত্রী ভোলা মিয়া জানান, আমি নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা। ঢাকা থেকে আসলাম। এখন নয়ারহাট যাব। কিন্তু জালালের মোড় থেকে নয়ারহাট দুর্গম এলাকা হওয়ায় অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে মোটরসাইকেলই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ঢাকা থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি। কিন্ত মোটরসাইকেলে সেসব জিনিসপত্র বহন করা কষ্টকর।
জুয়েল রানা/এসপি