‘হামার ছোলডা সকালে কাম করবা কারখানাত আসিছে, তারপর থাক্যা হামার ছোলডার কোনো খোঁজ নাই। আগুন লাগার পর অনেকে বের হবার পারলেও হামার ছোলডা মনে হয় বের হবার পারি না। পুড়া মারা গেছে মনে হয়। পুলিশরা কিছু জানাবার পারিচ্ছে না রে বা। ওহ বাপ শাহাজান, তুই কুন্টিরে!’

গগনবিদারী কান্না করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলেন সান্তাহার পৌরসভার সারিন্দা গ্রামের নাসির হোসেন। ছেলে শাহাজান হোসেনকে (২৩) না পেয়ে নাসির এখন দিশেহারা।

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকার হবির মোড় এলাকায় বিআইআরএস নামের একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। ওই কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন শাহাজান হোসেন।

এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু কারখানায় কর্মরত শাহাজানের কোনো খোঁজ পায়নি তার পরিবার। ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে কারখানার সামনে বসে আহাজারি করছেন তার বাবা।

সান্তাহার পৌরসভার কুমল দুগাছী মহল্লার লুৎফর রহমানের ১৫ বছর বয়সী ছেলে শিহাব হোসেনেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের ধারণা, শিহাবও আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

শিহাবের বাবা লুৎফর রহমান বলেন, হামার ছোলডা সকালে কাজে আসার পর ১২টার দিকে আগুন লাগে। তারপর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। হামার ছোলডাও মনে হয় আগুনে পুড়া মরা গেছে।

কাঁদতে কাঁদতে লুৎফর বলেন, সকালে হাসিমুখে কামোত বের হলে। এখন হামাকোক কান্দা লাগিচ্ছে ছোলডার জন্নি। কেউ কবার পারিচ্ছে না লাশগুলার মধ্যে কুন্ডা হামার ছোল। এডা কি হইয়া গেল রে।

শিহাবের ফুফু তাসলিমা বলেন, শিহাব এই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত। তার কাজ ছিল প্লাস্টিকের ক্লাশগুলো প্যাকেজাত করা। অভাবের সংসার। তাই ছয় মাস ধরে এখানে কাজ করে সংসারে জোগান দিচ্ছিল। এমনটা হবে আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি। এটা কী হয়ে গেল!

কারখানার চারজন মালিকের মধ্যে একজন সান্তাহার পৌরসভার মেয়র মোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আগুন কীভাবে লাগলে আমি জানি না। আমি আগুন লাগার সময় কারখানায় ছিলাম। মালিকানার কেউ ছিল না সে সময়। আমাদের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ইনভেস্ট ছিল। ৬ জন মারা গেছে। আরও ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক ছিল। তারা আগুন লাগার সময় বের হতে পেরেছে।

আদমদিঘী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, মরদেহগুলো উদ্ধার করা হচ্ছে। মেডিকেল পরীক্ষার পর মরদেহগুলোর পরিচয় জানা সম্ভব। কারণ দেহগুলো খুব খারাপভাবে পুড়ে গেছে।

নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক এ কে এম মোর্শেদ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মহরদেহগুলো খুব বাজেভাবে পুড়ে গেছে। যে কারণে পরিচয় জানা সম্ভব নয়। পরিচয় জানার জন্য মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজন আছে।

মো. দেলোয়ার হোসেন/এনএ