লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিও) হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে কয়েক লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার দায়িত্বে থাকা ক্লাস্টারের অন্তত ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ, ক্ষুদ্র মেরামত ও রুটিন মেইনটেনেন্সের বরাদ্দের চিঠিতে সই করতে ঘুষ নিয়ে পকেট ভারি করছেন। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলেই ঠুনকো অভিযোগেও শোকজসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) হাবিবুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতির ১৩টি লিখিত অভিযোগ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ ১৫টি দফতরে জানানো হয়। সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর অভিযোগটি করেন।  

এতে বলা হয়, রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ও হায়দারগঞ্জ ক্লাস্টারের ক্লাস্টার অফিসার হাবিবুর রহমান। এ ক্লাস্টারে ৩০টি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিবছর বিদ্যালয়গুলোতে স্লিপ, ক্ষুদ্র মেরামত ও রুটিন মেইনটেনেন্সের বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ঘুষ ছাড়া বরাদ্দের কাগজে সই করেন না। প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে স্লিপ বরাদ্দের জন্য তাকে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। এ ছাড়া ক্ষুদ্র মেরামত বরাদ্দ দিতে ১০ হাজার ও রুটিন মেইনটেনেন্সের জন্য ৭ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে আসছেন।

সম্প্রতি বামনী ক্লাস্টার অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমানের বিদায়ে নতুন করে হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানের জন্য এ ক্লাস্টারের অধিনস্ত সহকারী শিক্ষকদেরকে ভয় দেখিয়ে হাবিবুর রহমান লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ করায় বামনী সাইচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন খান সবুজকে শোকজ করা হয়। বিদায় ও বরণের আয়োজন এখনো করা হয়নি।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১২ নভেম্বর উপজেলা শহরের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এক নারী শিক্ষককে নিয়ে এসে ধর্ষণের চেষ্টা করেন হাবিবুর। সম্মান ক্ষুণ্নের ভয়ে ওই শিক্ষিকা কোথাও অভিযোগ করেননি। গোপনে ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা চলছে। হাবিবুর রহমান সপ্তাহে ১-২ দিন অফিস করেন। বিভিন্ন কাজে অফিসে গেলে শিক্ষকরা তাকে পান না। মোবাইলফোনে কল করলে তিনি প্রতি বুধবার ১২টার মধ্যে অফিসে আসার জন্য বলেন।

সরকারিভাবে হাবিবুর রহমানের জন্য মোটরসাইকেল বরাদ্দ থাকলেও তিনি তা ব্যবহার করেন না। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষকদেরকে ডেকে এনে তাদের মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এতে পাঠদান ব্যহত হয়। তার ক্লাস্টারে দায়িত্বে থাকা নারী শিক্ষকদেরকে শোকজের ভয় দেখিয়ে ইমু হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। মাতৃত্বকালীন ছুটির অনুমোদন নিতে ৮ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তিনি প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুইজন প্রধান শিক্ষক ও তিনজন নারী সহকারী শিক্ষক জানিয়েছে, সরকার শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে। কিন্তু রায়পুরে শিক্ষা অফিস ও কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে তা অনেকটা ভেস্তে যাচ্ছে। কর্মকর্তা টাকা নীতিতে বিশ্বাসী। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলেই কারণে-অকারণে, উদ্দশ্যপ্রনোদিতভাবে শোকজসহ হয়রানি করা হয়। নারীদের সঙ্গেও আপত্তিকর আচরণের অভিযোগ করে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

রায়পুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগগুলো যাচাই করলে এক পার্সেন্টও সত্যতা মিলবে না। শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমানকে বিদায় ও আমাকে বরণে কোনো অনুষ্ঠান করা হয়নি। এজন্য চাঁদা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র কাজ করছে।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুনছুর আলী চৌধুরী বলেন, অভিযোগটি এখনো আমার হাতে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে অপরাধীর বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরআই