বিদেশ গিয়েছিলাম ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না আমার। শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হলো। দেশে এসে মসজিদে ইমামতির চাকরি শুরু করি। কিন্তু এতে আমার চলে না। তাই ইমামতির পাশাপাশি কিছু করার চেষ্টা থেকে ১২শ টাকা পুঁজি নিয়ে নেমে পড়ি গাছের চারা বিক্রিতে। জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলি ছোট একটি নার্সারি। এখন বেশ ভালো আছি।

কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের পশ্চিম কোটাপাড়া গ্রামের মৃত নূরুল হক খলিফার ছেলে মালয়েশিয়া ফেরত ইসহাক খলিফা। পাঁচ বছর আগে বাবা মারা যান। তারপর থেকে পরিবারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হয় তাকে।

জানা যায়, ইসহাক দুই বছর তিন মাস মালয়েশিয়া ছিলেন। দেশে এসে মসজিদে ইমামতি শুরু করেন। পরে মসজিদের পাশেই জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেন নার্সারি। পরে নার্সারির চারাগুলো অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন। তার নার্সারি এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন নার্সারি থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ৭ শতাংশ জমিতে গড়ে উঠেছে ইসহাক খলিফার নার্সারি। রয়েছে হরেক রকমের ফুল ও ফল গাছের চারা। বিলবোর্ডে রয়েছে ঠিকানা ও ফেসবুক লিংক। অনেকেই আবার দেখতে আসছে নার্সারি। ভালো লাগলে কিনে নিয়ে যাচ্ছে চারা। বিভিন্ন ধরনের চারা বিক্রিতে এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। এখন তার বাগানে প্রায় তিন লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আগে আশপাশে কোনো নার্সারি ছিল না। শরীয়তপুর বা মাদারীপুর থেকে চারা কিনে আনতে হতো। এখন ইসহাক নার্সারি করায় সুবিধা হয়েছে। দূরে যাওয়া লাগে না। ইসহাক নিজে বাড়িতে গিয়ে গাছ লাগিয়ে দিচ্ছে। প্রস্তুত করে দিচ্ছে গাছ লাগানোর জায়গা। এতে গাছ নষ্টের কোনো ভয় থাকছে না। তাকে দেখে এলাকার বেকার যুবকরাও এতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

ইসহাক খলিফা বলেন, ২০১৯ সালে ১২শ টাকা দিয়ে প্রথমে কয়েকটি গাছ কিনি। পরে খলিফা নার্সারি নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলি। পেজে গাছের চারার ছবি আপলোড করি। এতে প্রথম দিন চারটি চারা বিক্রি করি। আস্তে আস্তে সাড়া পেতে থাকি। বাড়তে থাকে গ্রাহকও। অনলাইনে অর্ডার পেলে অন্য নার্সারি থেকে চারা এনে ডেলিভারি করতাম। তখন লাভ তেমন হতো না। এ বছর জায়গা ভাড়া করে নিজেই গড়ে তুলি নার্সারি। নিজের নার্সারি থাকায় এখন লাভ বেশি হয়। 

তিনি আরও বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর দেশে চলে আসি। পরিবারের হাল ধরতে হয়। দেশে আসার পর কী করব তা নিয়ে অনেক চিন্তায় পড়ে যাই। মসজিদে ইমামতির চাকরি নিই। ভাই বোন ও মাকে নিয়ে সেই টাকা দিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছিল। পরে কয়েকটি গাছ কিনে তা ফেসবুকে প্রচার শুরু করি। এখন আমার নার্সারিতে তিনশো প্রজাতির তিন লাখ টাকার উপরে চারা রয়েছে। পরিবারের পাশাপাশি মসজিদের মুসল্লীরাও আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি তরুণদের বলি, তোমরা নিজেরা উদ্যোক্তা হও, ছোট ছোট কিছু নিজেরা করো। 

ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে তার নার্সারির অনেক নাম শুনেছি। এ কারণে আজ দেখার জন্য এসেছি। যদি কোনো চারা পছন্দ হয় তাহলে নিব। তার কাছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা আছে। 

স্থানীয় নয়ন বলেন, নার্সারিটা দেখার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসে। সে যেভাবে নার্সারি করেছে, এটি আসলেই সুন্দর। তার এখানে কয়েকজন যুবক কাজ করে। এ ছাড়া তার পরে ছোট ছোট কয়েকটি নার্সারিও হয়েছে এখানে। 

বিজারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল কাদির ঢাকা পোস্টকে বলেন, মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি ইসহাক একটি ছোট নার্সারি গড়ে তুলেছে। সেই নার্সারিটি তরুণদের অনুপ্রেরণা। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই