টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে রূপের রানীখ্যাত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। জেলা শহরের মূল পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোসহ পুরো রাঙামাটি শহরজুড়ে লক্ষ করা গেছে পর্যটকদের উপস্থিতি। খালি নেই শহরের হোটেল-মোটেল। বাসের টিকিটও হয়ে গেছে অগ্রিম বুকিং।

ঝুলন্ত ব্রিজ, পলওয়েল পার্ক, রাঙামাটি পার্ক, শহীদ মিনার, ডিসি বাংলো, আরণ্যক হলিডে রিসোর্টসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র লোকে লোকারণ্য। তিন দিনের ছুটি হওয়ায় পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রগুলো। 

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. আল-আমীন জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ দিন কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। টানা তিন দিন ছুটি পাওয়াতে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে এসেছি। তবে এত বেশি পর্যটকের ভিড় থাকবে সেটা ধারণা করতে পারিনি। রাঙামাটির সৌন্দর্য দেখার পর সমস্যার কথা ভুলে গেছি। 

রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসছেন সুজন দেব বর্মন। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের অনেকগুলো পরিবার মিলে একটি বাসে রাঙামাটি ভ্রমণে এসেছি। তবে আবাসিক হোটেলগুলোতে জায়গা পেতে আমাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে শহরের বিভিন্ন হোটেলে রুম বুকিং করেছি। পর্যটন নগরীতে হোটেলের এত অপ্রতুলতা সত্যিই হতাশার। রাঙামাটি শহরকে আরও পর্যটনবান্ধব করতে আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের আহ্বান জানান তিনি।

পর্যটকদের এত বেশি উপস্থিতির কারণে এবং বিভিন্ন স্থানে মহান বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা থাকার কারণে রাস্তাঘাটে যানজট লক্ষ্য করা গেছে। বাস, মাইক্রোবাসসহ যানবাহনের পার্কিং করার জায়গা না পাওয়ায় সড়কের পাশেই পার্ক করে রাখা হয়েছে। এতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর আশপাশের সড়কে তৈরি হয় যানজট। 

পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। পাহাড়ে ঘেরা হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছোট-বড় নৌকা ভাড়া করে ভ্রমণে বের হচ্ছেন। অনেকেরই রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে রাত্রিযাপনের পরিকল্পনাও। 

রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার মো. রমজান আলী জানান, করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিজয় দিবসের এই ছুটিকে সামনে রেখে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। হ্রদ ভ্রমণসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে নৌ-পথে ভ্রমণের জন্য আমরা ছোট-বড় ট্যুরিস্ট বোটগুলো প্রস্তুত রেখেছিলাম। পর্যটকদের উপস্থিতি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। আশা করছি আজ থেকে পর্যটক আরও বাড়বে। 

পর্যটক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে শহরের টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতেও। পর্যটক আকর্ষণে স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন পাহাড়ি পোশাক, পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন দোকানদাররা। 

বুনন টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারীরা তুলি চাকমা জানান, পর্যটন ও শীত মৌসুমকে মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন পোশাক, ব্যাগ, আচার ও হাতে তৈরি পণ্য তুলেছি দোকানে। তিন দিনের ছুটিতে অনেক পর্যটক আসছেন। বিক্রিও মোটামুটি ভালো। 

রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, তিন দিনের টানা বন্ধের কারণে শহরের সিংহ ভাগ হোটেল রুমের শতভাগ বুকিং অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। যারা বুকিং না করে আজ শহরে প্রবেশ করেছেন তাদের রুম পেতে কষ্ট হচ্ছে। রাঙামাটি শহরে ৫৪টি হোটেল রয়েছে যা ১০ হাজার পর্যটক ধারণে সক্ষম। কিন্তু ছুটির কারণে পর্যটক সমাগম বেশি হওয়াতে অনেক পর্যটক রুম পাচ্ছেন না। তবে আশা করছি, এই সংকট খুব দ্রুতই কেটে যাবে। 

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৃজন কান্তি বড়ুয়া বলেন, দীর্ঘ দিন করোনা মহামারির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পর্যটকরা আবারও রাঙামাটিতে আসতে শুরু করেছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দীর্ঘ দিনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে রাঙামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসান ইকবাল বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি। জেলা পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে পর্যটকদের। 

মিশু মল্লিক/এসপি