চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আপন দুই ভাই। এরা হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত আকবর আলী শাহের বড় ছেলে তিনবারের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ মো. আব্দুল জব্বার শাহ ও মেজো ছেলে জমির উদ্দীন শাহ বালিকা মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ মো. জামাল উদ্দিন।

আলহাজ মো. আব্দুল জব্বার শাহ আনারস প্রতীক এবং শাহ মো. জামাল উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকেই কেউ কাউকে ছাড় দেননি। ফলে দুজনই প্রার্থী। দুই ভাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। উভয়েই নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী। আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে ভোটযুদ্ধ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বংশ পরম্পরায় এই পরিবারের উপজেলায় বেশ সুনাম রয়েছে। একই পরিবার থেকে দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিপাকে পড়েছেন পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও ভোটাররা। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তারা দুজনই ব্যস্ত দুজনের সমালোচনায়।

উপজেলা আংগারপাড়া গ্রামের শফিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন দুই ভাই নির্বাচনে এর আগেও দাঁড়িয়েছিলেন। সে বার বড় ভাই জিতেছিলেন। এবার কে জিতবে বলা যাচ্ছে না। কারণ তারা দুই ভাই ছাড়াও আমাদের এই ইউনিয়নে আরও দুইজন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। প্রার্থী বেশি হওয়ায় নির্বাচনটা জমে উঠেছে।

একই গ্রামের রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপন দুই ভাই চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছে।  কাকে ভোট দেব এ নিয়ে খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি।  

জানা যায়, গত ২০১১ সালেও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মো. আব্দুল জব্বার শাহ এবং অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) শাহ মো. জামাল উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বড় ভাই মোস্তফা আহমেদ শাহ।

চেয়ারম্যান প্রার্থী বড় ভাই আব্দুল জব্বার শাহ ঢাকা পেস্টকে বলেন, আমি এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকাবাসীর চাপে এবারও নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কারণ আমি তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান। গত নির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে গেছি।

তিনি বলেন, ছোট ভাই জামাল উদ্দিন আগেও একবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিল। তখন আমার সঙ্গে হেরে গেছে।। এবারও প্রার্থী হয়েছে। এতে কোনো সমস্যা দেখছি না।

চেয়ারম্যান প্রার্থী মেজো ভাই ভাই শাহ মো. জামাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দুই ভাই প্রথম নির্বাচন করছি না। এর আগেও আমরা দুই ভাই নির্বাচন করেছি এক সঙ্গে। সেবার বড় ভাইয়ের সঙ্গে হেরে গেছি। এবার আবার প্রার্থী হয়েছি। কারণ আমার বড় ভাই চেয়ারম্যান হয়ে আমার বাবার ও আমাদের পরিবাররে সুনাম নষ্ট করেছে। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আমার বাবার ও পরিবারের সুনাম ফিরিয়ে আনতে চাই।

এছাড়াও আংগারপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা আহমেদ শাহ্ (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ (ঘোড়া) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিকরুল হক জানান, আংগারপাড়া ইউনিয়নে দুই ভাইসহ চার জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ২১ হাজার ৮৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ৩৫ এবং নারী ভোটার ১০ হাজার ৭৯৫ জন।

উল্লেখ্য, দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ছয়জন, জাতীয় পার্টি মনোনীত দুইজন ও ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ২২০ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৪ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

ইমরান আলী সোহাগ//আরএআর