এবার ভোলার লালমোহনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া সম্মাননা স্মারকে ‘মুজিববর্ষ’র পরিবর্তে ‘মুবিজবর্ষ’ লেখা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা সমালোচনা চলছে। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। তবে বিষয়টিকে প্রিন্টিং মিস্টেক বলছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব কুমার হাজরা। 

এদিকে ভবিষ্যতে সবাইকে এ ধরনের ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকার জন্য আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। 

জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য লালমোহন উপজেলা প্রশাসন স্কুল, কলেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। স্মারকের মূল লেখায় ‘মুজিববর্ষ’র পরিবর্তে ‘মুবিজবর্ষ’ ছাপা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। 

তাদের দাবি- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, তাতে যদি মূল আয়োজকের নামই ভুল হয় তাহলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আয়োজকদের ভালোবাসা কতুটুকু তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। 

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব কুমার হাজরা জানান, সম্মাননা স্মারকগুলোকে উন্নতমানের করার জন্য বরিশালের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা কীভাবে করবে তার নির্দেশনাও সঠিক সময়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা ভুল করেছে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বরিশালের প্রতিষ্ঠানকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া যেসব যায়গায় এ সম্মাননা বিতরণ করা হয়েছে সেগুলো তুলে নিয়ে সংশোধন করে নতুনভাবে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, বঙ্গবন্ধুর নাম বিকৃত করা অন্যায়। সেটা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক। যারা এ ধরনের অন্যায় করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। যদি আজকে কোনো স্কুলের শিক্ষক বা অফিসের ছোট কর্মকর্তা কিংবা সাধারণ কর্মচারী বা অন্য কেউ এ ধরনের অপরাধ করতেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু এখানে কেন নেওয়া হবে না সেটাও প্রশ্ন। 

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব আদিল হোসেন তপু বলেন, লালমোহনে বঙ্গবন্ধুর নামকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক এই ভুল নিয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে । স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া সম্মাননা স্মারকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এতো বড় ভুল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই ব্যাঙ্গাত্মক ভুল করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আর কেউ এ ধরনের ভুল করতে সাহস পাবে না। 

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মুজিব বাঙালির একটি আবেগের নাম। সেই নাম লিখতে গিয়ে যারা ভুল করেন তারা আসলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরক্ত নন। তারা মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এ ধরনের ভুল করেন। যারা বঙ্গবন্ধুর নামকে ব্যাঙ্গাত্মক করে ভুল লেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। 

উল্লেখ্য, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশব্যাপী একযোগে সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে এ শপথ বাক্য পাঠ করান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও।

‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত জমকালো এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা। কিন্তু শপথ অনুষ্ঠানের ডায়াসে ‘মুজিববর্ষ’ বানানই ভুল ছিল। ডায়াসে ‘মুজিববর্ষ’র বদলে লেখা ছিল ‘মুজিবর্ষ’। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন আয়োজকরা। 

ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর