বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সংগ্রামী কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর ৭৯তম জন্মবার্ষিকী সোমবার (২০ ডিসেম্বর)। এ উপলক্ষে হবিগঞ্জ মানিক চৌধুরী পাঠাগাররি অস্থায়ী প্রতিকৃতি বেদিতে সমাজের সব স্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
 
জন্মদিন উপলক্ষে হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মানিক চৌধুরী পাঠাগারের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্যে ছিল জেলা শহরের শায়েস্তানগরে কবর জিয়ারত ও শীতবস্ত্র বিতরণ। বিকেলে মানিক চৌধুরী পাঠাগারে হয় আলোচনা সভা।

পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ইকরামুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে সভায় নেতারা বক্তৃতা দেন। হবিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্মৃতি স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ বাবুল চৌধুরী।

তিনি বলেন, মানিক ভাই না থাকলে হয়ত আমার মতো টগবগে তরুণের পক্ষে যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব হতো না। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি আমাদের সাহস যুগিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন।

হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসেবে কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর সুখ্যাতি ছিল দেশের সর্বমহলে। মানিক ভাই একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। তাছাড়া তিনি ঘাই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে ছিলেন ১৯৭৩-৭৪ সালে। সে কারণে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে মানিক চৌধুরীকে সম্মানিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক-৭৪ প্রদান করে। আমি বিশ্বাস করি, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠায় কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর সাহসী ভূমিকাকে সব সময় সাংবাদিকরা মনে রাখবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বাবু অনুপ কুমার দেব মনা বলেন, আমরা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে হবিগঞ্জ শহরে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মুখরিত করেছি। চুঙ্গা দিয়ে দলের আর্দশের কথা রাজনৈতিক কর্মীদের শোনাতে দেখেছি। তাকে কখনও ক্ষমতাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে দেখিনি। মানিক চৌধুরীর জীবনের শেষ দিকে ফটোস্ট্যাট মেশিন চালিয়ে সংসার চালাতে দেখেছি।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, আমরা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীকে শ্রদ্ধা করি। কারণ তিনি চা-শ্রমিকদের সম্মান দিতে জানতেন। মানিক চৌধুরীর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জের চাবাগানে তীরন্দাজ বাহিনী গঠিত হয় ও প্রতিরোধ যুদ্ধে চা শ্রমিকরা সাহসের সঙ্গে অংশ নেয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা বলেন, মানিক চৌধুরী হবিগঞ্জ মহকুমার এসডিও আকবর আলী খানকে ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে পিস্তল দেখিয়ে বলেন, জাতির এই দুর্দিনে আপনি অস্ত্র দেবেন কি-না বলেন। তারপর মানিক ভাই নিজেই সরকারি খাতায় স্বাক্ষর করে অস্ত্র বের করেন। আকবর আলী বাধ্য হন খুলে দিতে। একাত্তরের ২৭ মার্চে এমন সাহসিকতা আর কোনো নেতা দেখাতে পারেননি। মানিক ভাইয়ের নেতৃত্বে সেই অস্ত্র দিয়ে সিলেটের শেরপুর-সাদিপুরে প্রথম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালিত হয়। আর ব্যাংকের লুন্ঠিত অর্থ দিয়ে ভারতের ক্যাম্পগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাপড় ও জুতা কেনা হয়েছিল। যা জেনারেল ওসমানী নিজে তার বক্তব্যে বলে গেছেন। আমরা সেদিন উপস্থিত থেকে শুনেছি। এসব ইতিহাস হবিগঞ্জের নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে।

মানিক চৌধুরী পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, মানিক চৌধুরীর স্মৃতি স্মরণে এ পাঠাগার নির্মিত হয়েছে। এখানে সব সময় ভালো কাজ হবে। ভালো মানুষ গড়ার কাজে তরুণদের অনুপ্রেরণার শক্তি হবে এই পাঠাগার। কেয়া আমাদের কনিষ্ঠ সন্তান হয়েও অনেক বড় কাজে নিজেকে নিবেদিত করেছে। নীরবে পেছন থেকে কাজ করছে। আমি যদি বেঁচে নাও থাকি, আপনারা পাশে থেকে এই মহতী কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে কেয়াকে সাহায্য করবেন।

তিনি আরও বলেন, একজন ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি আমার কাজ এগিয়ে নেব। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণে সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করি।

বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও মানিক চৌধুরী পাঠাগারের সভাপতি অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ভাষা আন্দোলনে কারাবরণকারী সংগ্রামী এক ছাত্রনেতাকে সম্মান জানাতে আমরা আজ একত্রিত হয়েছি। যার সাহসী ভূমিকা আমরা  একাত্তরওে দেখেছি। মানিক চৌধুরীর বীরত্বের কথা চিরদিন ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

এসপি