দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিন দিন শীতের প্রকোপ বেড়েই চলছে। উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিমালয়ের হিম বাতাস ও কুয়াশায় কমছে তাপমাত্রা। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রির ঘরে নেমে এসেছে। ফলে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার পাঁচ উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। 

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে পরবর্তীতে সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। 

স্থানীয়রা জানান, উত্তর দিকে হিমালয় অনেক কাছাকাছি হওয়ায় পঞ্চগড়ে সন্ধ্যা হলে হিম শীতল বাতাস বইতে শুরু করে। পাশাপাশি ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ে জেলার পাঁচ উপজেলা। যা সকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা সূর্যের আলো দেখা গেলেও সূর্যের তেমন তাপ নেই। শীতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা গরম কাপড় সংগ্রহ করতে পারলেও নিম্নআয়ের শীতার্ত মানুষেরা গরম কাপড়ের খোঁজে ছুটছেন বিভিন্ন হাটবাজারের পুরাতন কাপড়ের দোকান ও সরকারি-বেসরকারি দফতরে।  

অন্যদিকে শীতের তীব্রতার কারণে দিন দিন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ চার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অনেকেই বেড না পেয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

 শীতে মানবেতর জীবনযাপন করা জেলা শহরের অটোচালক শাহ আলম বলেন, শীতের কারণে সন্ধ্যার পর যাত্রী পাচ্ছি না। তাই আমার আগের চেয়ে আয় কমে গেছে। কনকনে শীতে সকাল থেকে বসে আছি কিন্তু যাত্রী না পেয়ে বেকার সময় পার করছি। 

একই কথা বলেন জেলার তেঁতুলিয়ার পাথর উত্তোলন শ্রমিক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে শীত বেড়ে যাওয়ায় নদীতে নামতে হচ্ছে দেরি করে। নদীর পানি খুব ঠান্ডা হওয়ায় আগের মতো পাথর উত্তোলন করতে পারি না। সরকার থেকে কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না আমরা। 

আবহাওয়া অফিস বলছে- দিন দিন এ জেলার তাপমাত্রা আরও কমবে এবং শীতের তীব্রতাও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন শীত মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলার পাঁচ উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত সাড়ে ২১ হাজার শীতবস্ত্র ও নগদ ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এগুলো বিতরণ শুরু হয়েছে। 

এদিকে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

রনি মিয়াজী/আরএআর