বান্দরবানে সংস্কারের অভাবে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন সড়কের বেশির ভাগ বেইলি ব্রিজ। ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। শিগগিরই সংস্কার করা না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য বেইলি ব্রিজ। উঁচুনিচু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে ছোট ছোট ঝিরি ও ছড়া থাকায় চলাচলের জন্য কিছুদূর পর পরই রয়েছে লোহার তৈরি বেইলি ব্রিজ।

মেরামতের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে এসব ব্রিজ। এসব ব্রিজের কোথাও ধসে পড়ছে, কোথাও বা খুলে গেছে লোহার পাটাতন আবার কোথাও পচে গেছে কাঠ। এ অবস্থায় কোনো সেতুর নিচে বালুর বস্তা, কোনোটির ওপর পাটাতন আবার কোনোটির নিচে গাছের কাঠ দিয়ে আটকানো রয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে অসংখ্য যানবাহন। এছাড়া পর্যটন এলাকা হওয়ায় চলাচল করছে হাজারও পর্যটক। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এসব সেতু শিগগিরই সংস্কার করা না হলে ভেঙে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে যোগাযোগ-ব্যবস্থা।

বান্দরবান সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮টি সড়কে ১৩৩ বেইলি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে নতুন আরসিসি সেতু তৈরি হয়েছে ৮৭টি, বাকি সেতুগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

এদিকে সম্প্রতি বান্দরবানের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, অনেকগুলো বেইলি সেতুই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের বেইলি সেতুগুলো ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব সেতুর কোথাও পাটাতন উঠে গেছে, কোথাও পাটাতন পুরোনো হয়ে ভেঙে বা ছিদ্র হয়ে গেছে।

গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের শৈলপ্রপাত এলাকার বেইলি সেতু দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় পাটাতন উঠে প্রায় চার ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা শুভ চৌধুরী বলেন, এখানকার প্রতিটি ব্রিজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যত দ্রুত সম্ভব এগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। তা নাহলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এসব ব্রিজে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাস চালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, যাত্রী নিয়ে আসতে খুবই ভয় হয়। কোন সময় ভেঙে পড়ে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। 

রুমা উপজেলার ঠিকাদার জসিম উদ্দিন, বাদশা মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, ঠিকাদারি কাজের জন্য মালামাল ট্রাকে করে নিয়ে যাই। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে মালামালসহ ট্রাক পারাপারের সময় ভয় লাগে যদি সেতু ভেঙে পড়ে যায়। বেইলি সেতুগুলোর পরিবর্তে আরসিসি সেতু নির্মাণ করা জরুরি মনে করেন এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, পরিবহন মালিক-চালকরা।

বান্দরবান সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শরীফুজ্জামান বলেন, বান্দরবান সড়ক বিভাগের পাকা গার্ডার সেতু করার অপেক্ষায় আরও ৬৪টি বেইলি সেতু। এগুলো পাকা করার জন্য বান্দরবান সড়ক বিভাগ প্রাক্কলন তৈরির কাজ করছে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেলেই এসব সেতু পাকা করার কাজ শুরু হবে।

বান্দরবান জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য নকশা পাস করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই শিগগিরই সেতুগুলোকে সংস্কার করা হবে। আমরা যখনই সুযোগ পাচ্ছি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সেগুলো স্থানান্তর করছি।

সেতুগুলো বারবার মেরামতের কথা স্বীকার করে স্থায়ী সমাধানের জন্য সম্মিলিতভাবে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের কথা জানালেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী। তিনি জানান, যেহেতু একটা বড় প্রকল্প আমাদের নিতে হবে। আমি মন্ত্রীকে জানিয়েছি এবং তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, দ্রুতই এটার জন্য বরাদ্দ হবে।

এমএসআর