বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় থাকত ৯ বছরের নুসরাত জাহান। শীতে দাদাবাড়িতে হাঁস-রুটি-পিঠা খাওয়ার আবদার করেছিল বেশ কদিন ধরে। আসবে আসবে বলেও আসা হচ্ছিল না। তবে সুযোগ হওয়ায় আগেই বাড়ি চলে আসেন একটি বেসরকারি কোম্পানির গাড়িচালক ইসমাইল। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে অভিযান-১০ লঞ্চে উঠেন স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা।

তবে অভিযান-১০ ট্র্যাজেডির আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৯ বছরের নুসরাতের ইচ্ছা। সেইসঙ্গে নুসরাত ও তার মা দগ্ধ হয়ে ছাই হয়ে গেছে কি না তার নিয়ে সংশয়ে পরিবার।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বরগুনায় ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক রওনা দিয়ে ঝালকাঠিতে ছুটে আসেন ইসমাইল। সঙ্গে ছিল ভাই জলিলসহ পরিবারের স্বজনরা। সারাদিনেও সন্ধান মেলেনি মা-মেয়ের। শেষে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে রাত যাপনকালে কথা হয় এই পরিবারের সঙ্গে।

নিখোঁজ নুসরাতের চাচা জলিল বলেন, বরগুনার পরীরখাল এলাকায় বাড়ি আমাদের। আমরা নুসরাত আর ভাবি (রাজিয়া সুলতানা) আসবে বলে অপেক্ষায় ছিলাম। তারা বৃহস্পতিবার যখন লঞ্চে উঠেন তখনো মোবাইলে জানায়, নুসরাত বাড়ি আসতেছে বেড়াতে। কিন্তু ওরা আর ফেরেনি। এখন কোথায় আছে জানি না। পানিতে ডুবে গেছে, নাকি আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে তাও জানি না।
কান্না করতে করতে বার বার মূর্ছা যান ইসমাইল। আর পরিবারের বাকিরা শোকে পাথর।

জলিল বলেন, নুসরাত খুব চটপটে মেয়ে ছিল। বাড়ি আসলে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখত। কিন্তু আমাদের অসহায় করে দিয়ে ওরা হারিয়ে গেল।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  লঞ্চটি রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে ইঞ্জিনরুমে বিকট শব্দে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি