ফাইল ছবি

জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় আটকে আছে খুলনার দিঘলিয়া ভৈরব সেতুর কাজ। কার্যাদেশের দুই মাস পরও দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এই সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অল্প সময়ের মধ্যে টেস্ট পাইলসহ সেতুর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করা হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি নাগরিক নেতাদের।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ১২ নভেম্বর ‘ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। 

ভৈরব সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা।

বাকি টাকা অন্যান্য কাজে ব্যয় হবে। মূল সেতু হবে নগরীর কুলিবাগান আকাঙ্ক্ষা পাট গোডাউনের পাশ দিয়ে রেলগেট ঢাকা ট্রেডিংয়ের মধ্য দিয়ে দিঘলিয়ার নগরঘাট পর্যন্ত। ভৈরব সেতুতে পিলার বসবে মোট ৩০টি। এর মধ্যে নদীর ভেতরে বসবে তিনটি, বাকি ২৭টি পিলার নদীর পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে বসবে।

এছাড়া সেতুর সঙ্গে সড়কের সংযোগ ঘটাতে ফেরিঘাট থেকে নগরীর মহসীন মোড় এবং দিঘলিয়ার নগরঘাট থেকে উপজেলার মোড় পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। সেতুর জন্য নদীর উভয় পাশে ৭.০৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।  

খুলনা সড়ক ও জনপথ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনোয়ার পারভেজ (এসডিই) ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন কাজটি পেয়েছে। মূল সেতু তৈরির ক্ষেত্রে যে সার্ভেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ; যেমন ফিজিক্যাল ওয়ার্ক সার্ভে, টবোগ্রাফিক্যাল সার্ভে, হাইড্রোজিক্যাল সার্ভে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এ সার্ভেগুলো চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর এলাইনমেন্ট ড্রোন সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। কাজ শুরু করার আগে সেতুর এলাইনমেন্ট করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কোনো রকম ভুলত্রুটি হলে সেটি ঠিক করা যাবে না। এখন টেস্ট পাইল করা হবে। দিঘলিয়া প্রান্তে পুকুরমারা মোড়ে টেস্ট পাইল করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে টেস্ট পাইলের কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, কাজ শুরু করতে না পারার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ। ভৈরব নদীর পশ্চিম সাইড অর্থাৎ নগরীর মহসীন মোড় থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত কিছু বড় স্থাপনা থাকার কারণে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। শুধু নদীটুকু বাদে বাকি দুই পাশের জমিই অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ করা হলে দ্রুত কাজ করা যাবে। ভৈরব সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার সকল কার্যক্রম চলমান আছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত এ সেতুর কাজ শুরু করতে সক্ষম হব। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে দুই বছর। ২০২০ সালের নভেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে। সেই হিসেবে প্রকল্পের মেয়ার শেষ হবে ২০২২ সালে।

প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার অসীত ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্প এলাকার ভৈরব নদীর পূর্ব পাশে দিঘলিয়ার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অফিস বেজ ক্যাম্প এবং টিনের সীমানাপ্রাচীর দিয়ে স্টক ইয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। সেতু তৈরির সব মালামাল বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তুত রয়েছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আশরাফ উজ জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি সেতু হওয়ার আগে অ্যাপ্রোচ রোড, জমি অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ না করে কাজে হাত দেওয়া যায় না। সেজন্য কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সৃষ্টি হয়। দ্রুত সেতুটি নির্মাণ হলে ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, শ্রমিক ও কৃষক সুফল ভোগ করতে পারবে।  

মোহাম্মদ মিলন/এএম