স্বাদে অনন্য প্রাণবন্ধুর সিদল শুঁটকি, বিক্রি করছেন ৪০ বছর ধরে
শুঁটকি সব শ্রেণির মানুষের কাছেই প্রিয়। বিশেষ করে সিদল শুঁটকির ভর্তার স্বাদ অতুলনীয়। আর এই সিদল শুঁটকি দিয়েই ক্রেতাদের মন জয় করেছেন প্রাণবন্ধু দাস (৭০)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল বাজারে ৪০ বছর ধরে শুঁটকি বিক্রি করছেন তিনি। বাজারে আরও শুঁটকির দোকান থাকলেও স্বাদে এবং মানে অনন্য প্রাণবন্ধুর পরম যত্নে বানানো সিদল শুঁটকিই ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টাকার সিদল শুঁটকি বিক্রি করেন প্রাণবন্ধু দাস।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অরুয়াইল ইউনিয়নের বাদেঅরুয়াইল গ্রামের বাসিন্দা প্রাণবন্ধু দাস ৪০ বছর আগে অরুয়াইল বাজারে শুঁটকির ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি বিক্রি করলেও ১৫-১৬ বছর ধরে শুধু সিদল শুঁটকিই বিক্রি করছেন দোকানে।
প্রতিদিন অরুয়াইল ও পার্শ্ববর্তী পাকশিমুল ইউনিয়নসহ সরাইল উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন শুঁটকি নেওয়ার জন্য আসেন প্রাণবন্ধুর দোকানে। সরাইল উপজেলাজুড়ে ছড়িয়েছে প্রাণবন্ধুর সিদল শুঁটকির খ্যাতি। অনেকে বিদেশে থাকা প্রিয়জনদের কাছেও প্রাণবন্ধুর সিদল শুঁটকি পাঠান।
এখন প্রাণবন্ধুর সঙ্গে তার ছেলে রতন দাসও শুঁটকির ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। করোনার আগে তারা প্রতিদিন অন্তত ৩০-৩৫ হাজার টাকার শুঁটকি বিক্রি করতেন। আর এখন গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকার শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে মাসে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি করেন বাবা-ছেলে। প্রাণবন্ধুর দোকানে প্রতি কেজি শুঁটকির দাম ৬০০ টাকা। তবে বাজারের অন্য শুঁটকির দোকানে সিদল বিক্রি হয় ৪৫০-৫০০ টাকা দরে।
প্রাণবন্ধু দাস জানান, চট্টগ্রাম থেকে শুকনো বাসপাতি শুঁটকি কিনে আনেন তিনি। এ বাসপাতি শুঁটকিগুলো ভারত থেকে আসে। শুঁটকি আনার পর সেগুলো বাছাই করেন। এরপর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরম যত্নে পুঁটি মাছের তেল মাখেন। মটকায়ও মাখেন তেল। এরপর শুঁটকি রেখে মটকার মুখ ছয় মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। এরপর সেগুলো বিক্রির উপযোগী হয়। প্রতিটি মটকায় ৪০-৪৫ কেজি শুঁটকি থাকে। বাড়িতে বসেই শুঁটকি তৈরি করেন তিনি।
প্রাণবন্ধু দাসের ছেলে রতন দাস বলেন, ‘আমাদের শুঁটকির দাম অন্য দোকানের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে আমরা শুঁটকির গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আর ভালো বলেই মানুষজনের কাছে আমাদের শুঁটকি খুব প্রিয়। সবাই যেন নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণ মতো নিতে পারেন, সেজন্য পাকারি বিক্রি না করে খুচরা বিক্রি করি’।
পাকশিমুল ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ আলী জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে নিয়মিত প্রাণবন্ধু দাসের কাছ থেকে শুঁটকি নিচ্ছেন। এই শুঁটকির ঘ্রাণ এবং স্বাদ অন্য কোনো দোকানের শুঁটকিতে নেই। বিদেশে থাকা ছেলের কাছেও প্রাণবন্ধু দাসের সিদল শুঁটকি পাঠান বলে জানান তিনি।
আরেক ক্রেতা মনসুর আলী জানান, বাজারে বেশ কয়েকটি শুঁটকির দোকান আছে। কিন্তু প্রাণবন্ধু দাসের দোকানেই মানুষজন ভিড় জমান। কারণ সবাই জানেন, তার শুঁটকি ভেজালমুক্ত। প্রাণবন্ধু দাসের শুঁটকির স্বাদ অন্য কোনো দোকানের শুঁটকিতে পাওয়া যায় না। অন্য দোকানের চেয়ে শুঁটকির দাম কিছুটা বেশি হলেও তার শুঁটকি গুণগত মানসম্পন্ন।
শুঁটকি ব্যবসায়ী প্রাণবন্ধু দাস বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম করে যত্ন নিয়ে শুঁটকি তৈরি করি। আমি যে বাসপাতি শুঁটকি দিয়ে সিদল তৈরি করি, সে বাসপাতি অরুয়াইল বাজারে কোনো দোকানদারই আনে না। আমি পুঁটি মাছের তেল ব্যবহার করি- যেটি অন্য কেউ করে না। অনেক ক্রেতা আছেন, যারা আমার শুঁটকি বিদেশে প্রিয়জনদের কাছে পাঠায়’।
‘মানের সঙ্গে আপোস করি না বলেই আমার তৈরি শুঁটকি ক্রেতারা চোখ বন্ধ করে নেন। আমার প্রতি ক্রেতাদের এ আস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। সব সময় লাভের চেয়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করেছি’- উল্লেখ করেন প্রাণবন্ধু দাস।
অরুয়াইল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবু তালেব বলেন, বাজারে আরও অনেক দোকান থাকলেও প্রাণবন্ধুর দোকানের শুঁটকির কদর বেশি। এখন তার ছেলেও ব্যবসা করছেন। তারা খুব পরিচ্ছন্নভাবে শুঁটকি বানায়। মানও খুব ভালো। আর ভালো বলেই মানুষজন তাদের শুঁটকি অনেক পছন্দ করে।’
এসপি