নিহত স্বপ্নীল

ঢাকায় কাজ সেরে সপরিবারে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বরগুনার বামনায় ফিরছিলেন সঞ্জীব হাওলাদার। তাদের বাড়ি উপজেলার লহ্মীপুরা গ্রামে। আগে থেকেই বাড়ির অন্যদের জানিয়েছিলেন বাড়ি ফেরার কথা। লঞ্চে ওঠার পরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত ছিল দুই ছেলে প্রত্যয় ও স্বপ্নীল। এমনকি প্রত্যয় ঘুমালেও ঘুমায়নি স্বপ্নীল

অবশ্য শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বাড়ি ফিরেছে সবাই। শুধু পরিবারের সবার ছোট স্বপ্নীল (১৪) দগ্ধ হয়ে নিথর দেহে ফিরেছে।

তার সমাধির পাশে বসে কান্না করছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা সঞ্জীব হাওলাদার। ঘরে স্বপ্নীলের মা লক্ষ্মী রাণী আহাজরি করছেন। সঞ্জীব বার বার বলছিলেন, সবার শেষে এসে আমার স্বপ্নীল সবার আগে চলে গেছে। আমি বেঁচে থাকবো কীভাবে? বাড়ি আসার আনন্দে যে স্বপ্নীল সারারাত ঘুমায়নি সেই স্বপ্নীল জীবন্ত আর বাড়ি ফিরতে পারল না।

সঞ্জীব হাওলাদার জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে বরগুনার এমভি অভিযান লঞ্চে স্ত্রী, বড় ছেলে প্রত্যয় আর স্বপ্নীলকে নিয়ে উঠে দ্বিতীয় তলার ডেকে বিছানা বিছিয়ে আসছিলেন। বড় ছেলেকে ঘুম পাড়াতে পারলেও স্বপ্নীল বারবার উঠে বাইরে তাকাচ্ছিল আর বলছিল, বাবা বাড়ি যেতে কতক্ষণ লাগবে? মাঝ রাতে স্বপ্নীল বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে যায়। ঠিক তার এক দুই মিনিটের মধ্যে বিকট শব্দে লঞ্চের নিচ তলায় বিস্ফোরণ হয় এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে দোতলায়। আতঙ্কে সবাই ছোটাছুটি করছিলেন। আগুনের ভয়াবহতায় সবাই নদীতে ঝাঁপ দেন। লোকজনের এতো বেশি হুড়োহুড়ি ছিল যে আদরের ছোট ছেলেকে টয়লেট থেকে বের করে নিয়ে এসে নদীতে ঝাঁপ দিতে পারেননি। ফলে স্ত্রী, বড় ছেলে প্রত্যয়কে নিয়েই সুগন্ধা নদীতে ঝাপ দেন সঞ্জীব হাওলাদার।

তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় সুগন্ধা তিনি নদীতে অর্ধেক পোড়া মরদেহ পান স্বপ্নীলের।  শুক্রবার রাত ১০টার দিকে স্বপ্নীলকে নিজ বাড়িতে সমাধিস্থ করা হয়।

এদিকে স্বপ্নীলের মৃত্যুতে ওই গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, পাশের গোলাঘাটা গ্রামের হামিদ নামে আরও একজনের মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। তিনিও এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার  (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। নিহত ৪১ জনের ৩৭ জনই বরগুনার বাসিন্দা।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর