‘হামরা গরিব মানুষ। ভোট না দিয়্যা উপায় নেই। শরীরের অবস্থা ভালো নোয়ায়। তারপরও সবায় কইছে ভোট দেওয়া নাগবে। ওই তকনে ভোট দেবার আসছি। এ্যালা শরীর না চললেও ভোট দেওয়া নাগে বাহে। নাইলে ফির ছাওয়ারা (প্রার্থীরা) গোসা হইবে।’ 

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আয়শা বেগম। তার বয়স প্রায় ৮৫ বছর। রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের মন্ডলেরহাট লোহানীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় ওই নারী ভোটারের। শীতের মিষ্টি রোদমাখা সকালে ভাইয়ের কোলে চড়ে ভোটকেন্দ্রে এসেছিলেন তিনি। 

এদিকে সকাল ৮টা থেকে বদরগঞ্জের ১০ এবং গঙ্গাচড়ার ৯ ইউপিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। 

এদিকে লোহানীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ছকিনা বেওয়া নামে আরেক ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। মেয়ের হাত ধরে কেন্দ্রে আসা এই নারী ভোটার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুই অসুস্থ বাহে। ঠিকমতো হাঁটিবার পারো না। শরীরও চলে না। বেটির হাত ধরি ভোট দেবার জনতে আসছু। যাক ভালো লাগবে তাকে ভোট দিম।

আয়শা ও ছকিনার মতো অনেকেই কারও কোলে চড়ে নয়তো লাঠিতে ভর করে ভোটকেন্দ্রে আসছেন। উৎসবের এই ভোট শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হবে এমন আশা করছেন সাধারণ ভোটাররা। 

সকাল থেকে লোহানীপাড়া ইউনিয়নের শিমুল ঝুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানারহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, মাদাইখামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটারদের ভোট দিতে দেখা গেছে। তবে কেন্দ্রের চেয়ে বাইরে ভোটার ও সমর্থকদের উৎসবমুখর উপস্থিতি বিরাজ করছে।

লোহানীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আশরাফুল সরকার জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ৯৮১ ও পুরুষ ৯৩৯ জন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী অনাবিল লোহানী জাদু (চশমা প্রতীক) ঢাকা পোস্টকে জানান, এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তবে সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার সমর্থকরা বিভিন্নভাবে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করছেন।

এদিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ১০১ জন প্রার্থী দলীয় ও বিভিন্ন প্রতীকে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে ৭০৩ এবং সংরক্ষিত সদস্য (মহিলা) পদে ২৬৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রংপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ফরহাদ হোসেন জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ জন পুলিশ ও ১৭ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ১ হাজার ১৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ২ হাজার ৩৩২ জন পুলিং অফিসারও নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দুই উপজেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি র‌্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা প্রতিটি ইউনিয়নে টহল দেবেন। কোনো ঘটনার খবর পেলে যেন ১৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে পারে সেজন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি