হাসিনা বেগম

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে একটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হাসিনা বেগম পেয়েছেন মাত্র ৯৩ ভোট। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের ‌‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী পেয়েছেন ৭ হাজার ৪০৫ ভোট। তবে পরাজয়ের কারণ হিসেবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দুষছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাসিনা বেগম সৈয়দপুর খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন মোট ৯৩টি। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ রানা বাবু মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৭ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। হাসিনা বেগম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আজম আলী সরকারের স্ত্রী।

এলাকার ভোটাররা জানায়, মনোনয়ন সঠিক হয়নি বলে খাতামধুপুর ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। দলের একনিষ্ঠ ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দিয়ে যাকে দেওয়া হয়েছে, তাকে অনেকে চেনেন না।

পরাজিত প্রার্থী হাসিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার জন্য কাজ করেননি। বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন, তার জন্য ভোট চেয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীর ভাই বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

তিনি আরও বলেন, প্রভাব খাটিয়ে ভোট নিয়ে গেছেন সেদিকে। আমি বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানাব। তারা আমাকে তো মূল্যায়ন করেননি বরং প্রতীককে অবমাননা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে গেছেন।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসিনা বেগম দলীয় প্রার্থী হওয়ার পর ইউনিয়নের কোনো নেতাকর্মীকে ডাকেননি বা বলেননি ভোট করার জন্য। এমনকি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও বলেননি। তিনি মূল্যায়ন করেননি কাউকে।

তিনি আরও বলেন, এমনকি উপজেলা সভাপতি-সেক্রেটারি প্রচারণায় এসেছিলেন তারাও ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর করেননি। উপজেলা থেকে কোনো নির্দেশনাও ছিলো না আমাদের কাছে। আমার ছোট ভাই পাইলট জিতেছে ঠিকই কিন্তু তার হয়ে ভোট চাওয়া বা প্রচারণা চালানোর কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।

সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাসুদ রানা ও হাসিনা বেগমের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। খাতামধুপুরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন আছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার ইস্যু রয়েছে সেখানে।

ওই দুই পরিবার থেকে পালাক্রমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মাসুদ রানা পাইলটকে মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা হাসিনা বেগমের পক্ষ নেন। ফলে আমাদের এর মাশুল দিতে হলো বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী আনারস প্রতীকে ৬ হাজার ৯৭৮, আবুল কাশেম আলী হাতপাখা প্রতীকে ২২৬ এবং মাহফুজ রেজা টেলিফোন প্রতীকে ৭৬ ভোট পান। ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলী রেজা রাজু ঢাকা পোস্টকে জানান, মোট ১৪ হাজার ৭৭৮টি ভোট পড়েছে। এরমধ্যে বাতিল হয় ৩৪২টি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, পাঁচটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ২৬ ডিসেম্বর। এই উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। পাঁচ ইউনিয়নে ২৯ জন চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করলেও ১৩ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

এমএসআর