ঘরে নতুন অতিথি আসছে, এমন খবরে গরিব পরিবারটিতে সবার মুখেই ছিল হাসিখুশি। তবে একসঙ্গে দুই ছেলে ও এক মেয়েসন্তান জন্মগ্রহণের পর সেই হাসি হওয়ার কথা ছিল বাঁধভাঙা। কিন্তু যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির ওপর। কারণ, যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেই অভাবের সংসারে তিন শিশুর ভাগ্যে এখন জুটছে না দুধও।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের মোকিন্দর মন্ডল ও ধৈয়ত্রী মন্ডল দম্পতির ঘরে জন্মেছে তিন যমজ সন্তান মাহির মন্ডল, মোহিনী মন্ডল ও মেঘনাথ মন্ডল। তাদের বয়স এখন দেড় মাস। মোকিন্দর মন্ডল একজন ইটভাটা শ্রমিক।

তিন যমজের দাদা কানাই মন্ডল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অন্যের মাছের ঘেরে দিনমজুরের কাজ করি। ছেলেটা ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে। কোনোমতে চলে অভাবের সংসার। দেড় মাস আগে শ্যামনগরে সিজারের মাধ্যমে একসঙ্গে দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। বাড়িতে নতুন অতিথি আসায় খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু তারা মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না। কিনেও খাওয়াতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, জন্মের পর থেকেই ধারদেনা করে বাচ্চাদের দুধ কিনে খাওয়াচ্ছি। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ দেখতে এসে ১০০ থেকে ২০০ টাকা দেয় আবার কেউ দুধ কিনে দেয়, সেগুলো খাওয়াচ্ছি। কিন্তু সব সময় জোগাড় করতে পারছি না। ছেলেটাকে বরিশালে ইটভাটায় পাঠিয়ে দিয়েছি। বউমা নাতিদের নিয়ে পাশের ধানখালী গ্রামে বাবার বাড়িতে রয়েছে।

তিন সন্তানের মা ধৈয়ত্রী মন্ডল বলেন, এখন ঠিকমতো খেতে দিতে পারছি না। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মানুষ সহযোগিতা করে দুধ দেয়, সেগুলোতে চলে কয়দিন। আমার বাবাও (জয়দেব মন্ডল) দিনমজুরের কাজ করেন। তাদের পক্ষেও সম্ভব হয় না জোগান দিতে। তিনি আরও বলেন, ৬০০ টাকা মূল্যের এক কৌটা দুধ তিন দিনে শেষ হয়। আমার তিন সন্তানের জন্য কেউ দুধ দিয়ে সহযোগিতা করলে খুব উপকৃত হব।

তিন যমজের নানি পাঁচী রানী বলেন, দিনমজুরের কাজ করে দুধ কিনে খাওয়াতে পারছি না। সামান্য রোজগারে সংসার চালানো আবার তিন সন্তানের জন্য দুধ কিনতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ কেউ দুধ কিনে দিয়ে সহযোগিতা করছে। খুব কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে এখন। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ সহযোগিতা করেননি।

এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

শ্যামনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, একবার ইউএনও স্যারের কাছে তিন যমজ সন্তান নিয়ে তারা এসেছিলেন। ইউএনও স্যারের নির্দেশে দুই কৌটা দুধ কিনে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আমাদের জরুরি কোনো সহায়তা দেওয়ার সুযোগ এখন নেই।

তবে পরিবারটি যদি সমাজসেবার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে, তবে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ২ থেকে ৫ হাজার টাকা সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি পেতেও সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

আকরামুল ইসলাম/এনএ