‘প্রতিটি ইউনিয়নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আলাদা প্রার্থী ছিল।’ বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে বোয়ালমারী ওয়াপদা মোড়ে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ অভিযোগ করেছেন বোয়ালমারীর পাঁচটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পরাজিত পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী।

তবে পরাজিত প্রার্থীদের এ অভিযোগ ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নাকচ করে দিয়েছেন বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াব মোল্লা, চতুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবুল বাশার, রূপাপাত ইউনিয়নের জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মহব্বত আলী, ময়না ইউনিয়নের জেলা মৎস্যজীবী লীগের সদস্য পলাশ বিশ্বাস ও দাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সজ্জাদুর রহমান।

তারা সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। গত ২৬ ডিসেম্বর দেশব্যাপী চতুর্থ পর্যায়ের নির্বাচনে বোয়ালমারীর ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১০ প্রার্থীর মধ্যে ৯ জনই পরাজিত হন। শুধু শেখর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামাল আহমেদ জয়লাভ করেন।

এর মধ্যে বোয়ালমারী উপজেলা বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। নৌকার ঘাঁটিতে নৌকাডুবির ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পরাজিত ওই পাঁচ প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের কোনোরূপ সহযোগিতা করেননি। প্রত্যেক প্রার্থী তাদের (উপজেলার সভাপতি ও সম্পাদক) ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির ভোট পর্যন্ত পাননি বলে অভিযোগ করেন। তারা আরও বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫১। অথচ ওই সব ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার ভোট ১০টাও পাইনি।

তারা বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একজন করে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছিল। আমরা এ বিষয়গুলো জানিয়ে আমাদের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করব।

চতুল ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী খন্দকার আবুল বাশার বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বারবার সহযোগিতার জন্য গেলে তারা আমাকে কোনো সহযোগিতা করেননি এবং তাদের অনুসারীরাই উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদে থাকা ব্যক্তিরাই নৌকার বিপক্ষে চশমা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, চতুল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আমি পাঁচ ভোট পেয়েছি। অথচ ওই কেন্দ্রের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি। আর ওই কেন্দ্রে ভোট দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জালাল সিকদারসহ কোনো ওয়ার্ডের নেতাকর্মীই নৌকার পক্ষে ভোট চাননি। ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫১। তাহলে আমি ওই কেন্দ্রে পাঁচটি ভোট পাই কীভাবে?

রূপাপাত ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মো. মাহব্বত আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের সভাপতি নিজে আমার পক্ষে কাজ না করে পাশের ইউনিয়নের একটি চায়ের দোকানে বসে থাকতেন। আর তার ছেলে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে কাজ করেছেন।

ময়না ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী পলাশ বিশ্বাস বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির মো. সেলিম, সদস্য আবুল খায়ের এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সিদ্দিকী আমাকে কখনোই নির্বাচনে সহযোগিতা করেননি। জাফর সিদ্দিকীকে বারবার বলার পরেও তিনি দলীয় কোনো লোক আমার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে দিতে পারবেন না বলে জানান। সেলিম এবং জাফর চাচা-ভাতিজা মিলে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের (চরমোনাই পীর) হাতপাখার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।

পরাজিত পাঁচ দলীয় প্রার্থীর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পীকুল মীরদাহ বলেন, এ অভিযোগ, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, আমরা সব ইউনিয়নেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না।

অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন বলেন, পরাজিত প্রার্থীদের আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। ১০ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে গেছি। ওরা পরাজিত হয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এ জাতীয় অভিযোগ করছেন।

জহির হোসেন/এনএ