এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের জন্য নির্ধারিত বরগুনা সদরের পোটকাখালী গ্রামে খাকদোন নদীর তীরবর্তী গণকবরে এখনো দুটি কবর লাশের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুইজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবারও দুজনের মরদেহ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত হবে না তাদের এখানে দাফন করার জন্য কবরগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।

সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন প্রিয় সন্তান, কেউ ভাই-বোন, কেউবা আবার হারিয়েছেন মা-বাবাকে। প্রিয়জনদের হারানোর বেদনায় বিষাদময় বরগুনার বিভিন্ন গ্রাম। গ্রামে গ্রামে বইছে শোকের মাতম।

নিহতদের বেশিরভাগ যাত্রীর বাড়িই বরগুনায় বলে জানিয়েছে প্রশাসন। নিহতদের সবাইকে শনাক্ত করা যায়নি এখনো। তাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিখোঁজ ও অজ্ঞাতদের শনাক্ত করতে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত দুদিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে সিআইডির ফরেনসিক টিমের কাছে অজ্ঞাত ও নিখোঁজ ৩২ জনের বিপরীতে ৪৪ জন স্বজন ডিএনএ নমুনা দেন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনো উদ্ধার হচ্ছে নিখোঁজদের মরদেহ। নতুন করে উদ্ধার হওয়া বরগুনার যাত্রীদের মরদেহ আনা হবে পোটকাখালী গণকবরে। স্বজনরা অজ্ঞাতদের সনাক্ত করতে না পারলে সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হতে হবে তাদের। ইতোমধ্যে দুটি কবরও পস্তুত করে রেখেছে প্রশাসন। 

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বরগুনার পোটকাখালী গণকবর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অজ্ঞাত ২৩ জনের ২১ কবরের পাশেই প্রস্তুত রয়েছে আরও দুটি কবর। 

এর আগে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) উদ্ধার হওয়া ৩৭ জনের মরদেহ বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে ১৪ অজ্ঞাতের মরদেহ সরকারিভাবে দাফনের আগেই শনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনরা। বাকি ২৩ মরদেহের গোসল ও জানাজা সম্পন্ন করে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বরগুনার পোটকাখালী গণকবরে দাফন করে প্রশাসন।

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিয়া শারমিন বলেন, গণকবরের জন্য মোট ৩০টি কবর খোঁড়া হয়েছিল। এর মধ্যে ২১টি কবরে ২৩ জনের মরদেহ দাফন করা হয়। বাকি লাশ শনাক্ত করে স্বজনরা নিয়ে যান। এজন্য খুঁড়ে রাখা বাকি ৯টি কবর থেকে যায়। আমি বলেছিলাম কবরগুলো ভরাট করে ফেলার জন্য। হয়তো দু-একটি ভরাট করা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা পারভিন বলেন, বাকি কবরগুলো ভরাট করার কথা ছিল। কিন্তু ঝালকাঠিতে মরদেহ উদ্ধার হতে থাকায় দুটি কবর ভরাট করা হয়নি। যদি কোনো পরিচয়হীন লাশ আসে তাকে এই কবরে দাফন করা হবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, অজ্ঞাত ২৩ মরদেহ পোটকাখালী গণকবরে দাফন করা হয়েছে। এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। নতুন করে উদ্ধার হওয়া বরগুনার যাত্রীদের মরদেহ শনাক্ত না হলে তাদেরকেও পোটকাখালী গ্রামে খাকদোন নদীর তীরবর্তী গণকবরে দাফন করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, দাফনের পরও যদি স্বজনরা শনাক্ত করতে আসে তাহলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে স্বজনদের করব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পরিচয় শনাক্ত না হওয়া ২৩ জনকে বরগুনা সদরের পোটকাখালী গ্রামে খাকদোন নদীর তীরবর্তী গণকবরে দাফন করা হয়েছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর