সন্তানদের সাফল্যে আনন্দিত হন বাবা-মা। কিন্তু মেয়ের জিপিএ-৫ পাওয়ার খবরে দুঃখের পাল্লা ভারী হলো শফিকুল ইসলাম-মরিয়ম খাতুন দম্পতির। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তাদের মেয়ে সাফিয়া সিলভি মমতা জিপিএ-৫ পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। কিন্তু তার আগেই ২৫ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে এই মেধাবী শিক্ষার্থী পাড়ি দেয় অনন্তলোকে।

সাফিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী। তার মা মরিয়ম খাতুন উপজেলার আলিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে সাফিয়া ছিল বড়। উপজেলার মাদারীগঞ্জ সাফিক্স প্রি-ক্যাডেট কিন্ডারগার্টেন থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সাফিয়া।

কষ্ট বাড়বে তাই মেয়ের রেজাল্ট দেখেননি মা মরিয়ম খাতুন। কিন্তু তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফলাফল নিয়ে যান সাফিয়ার বাসায়। তিনিই জানান সাফিয়া জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মরিয়ম খাতুন বলেন, সাফিয়ার এই ফলাফলে বাড়ির সবার আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল। পাড়া-প্রতিবেশীদের মিষ্টি খাওয়ানোর কথা ছিল। সেখানে বাড়িজুড়ে এখন কেবল নীরবতা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৪ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু এর তিন দিন আগে ১১ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে সাফিয়া। ১২ নভেম্বর তাকে ভবানীগঞ্জের একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার নাড়িতে স্পট বা আলসার থাকার কথা জানান চিকিৎসক।

পরিবারের বারণ সত্ত্বেও অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষায় অংশ নেয় সাফিয়া। পরীক্ষা শেষে ১৭ নভেম্বর তাকে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেদিন ছিল শুক্রবার। চিকিৎসক না থাকায় সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইরের ক্লিনিকে। একে একে চারটি ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ঘুরে ফের তাকে নেওয়া হয় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে।

গত ২৫ নভেম্বর অস্ত্রোপচার হয় সাফিয়ার। অস্ত্রোপচার শেষ হলে সাফিয়ার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে রাত ১২টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সাফিয়া।

মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা শফিকুল ইসলামের। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আজ ফিকে। তিনি জানান, সাফিয়াকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। বড় হয়ে সে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।

সাফিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকিরুল ইসলাম। তিনি সম্পর্কে সাফিয়ার মামা। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল সে। পড়াশোনায় তার ছিল অন্য রকম মনোযোগ। গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে সে সবাইকে কাঁদিয়ে গেল। তার অকালে মৃত্যু সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি