কারও কাছে হাত পাতেন না হারুন। কেউ স্বতপ্রণোদিত হয়ে সাহায্য করতে এলেও গ্রহণ করেন না। বরং পরিশ্রম করে সংসার চালাতেই হারুন গর্ববোধ করেন। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হারুন দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন পত্রিকার হাকার হিসেবে। তারপর ১১ বছর ধরে চা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।

কিশোরগঞ্জ নগর মাতৃসদনের পাশে ছোট একটি টং দোকানে শনিবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী হারুন আর রশীদের (৩২) সঙ্গে। সারাদিন দোকানে বসে চা, পান বিক্রি করেন তিনি। তার এই অদম্য বাঁচার লড়াই অন্যদের বিস্মিত ও শ্রদ্ধাবনত করে।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার হারুয়া এলাকার মৃত আবদুল মতিনের ছেলে হারুন আর রশীদ জন্ম থেকেই প্রতিবন্দ্বী। তার প্রায় অচল দুটি হাত সরু ও বাঁকা। এ অবস্থাতেই অদম্য হারুন বাঁচার লড়াই করছেন। যেদিন দোকান না খোলেন, সেদিন তার আর কোনো আয় হয় না। তাই রোদ কিংবা বৃষ্টি— প্রতিদিনই হারুনকে দেখা যায় চা বিক্রি করতে।

প্রতিদিন সকালে দোকানে আসেন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়। হারুন সরকারি প্রতিবন্দ্বী ভাতা গ্রহণ করেন কিন্তু কারও কাছে হাত পাতেন না। হারুনের সংসারে দুই মাস হলো ফুটফুটে একটি মেয়েসন্তানের জন্ম হয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রী, মাসহ তার সংসারে সদস্যসংখ্যা চারজন। এই চা বিক্রি করেই কোনোমতে চলে তার চারজনের সংসার।

হারুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার হাত দুইডা অচল। তারপরও কাম কইরা খাইট্টা (খেটে) সংসার আর জীবন চালাই। বাবা মারা গেছেন সেই কবে। তারপর থেকে মা আমার সঙ্গেই থাকেন। বিয়ে করেছি দুই বছর হলো। আর দুই মাস হলো আমার একটি মেয়ে হয়েছে। আগে পেপার বিক্রি করতাম। চা বিক্রি করা সহজ। তাই ১১ বছর ধরে চা বিক্রি করার আয় দিয়া আল্লাহর রহমতে চলতাছি। আল্লাহ ভরসা। মাইনষের কাছে আত (হাত) পাতলে লজ্জা পাই। তাই নিজেই কাম করে সংসার চালাই।

তিনি আরও বলেন, কাজ করে সংসার চলাতেই আমার গর্ব। কারও কাছে হাত পাততে লজ্জা লাগে। তাই কোনো দিনই মানুষের কাছে হাত পাতিনি। এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন।

এলাকাবাসী নুরু মিয়া বলেন, আমরা সুস্থ মানুষরাও অনেক সময় অন্যের দয়া, করুণা ও সুদৃষ্টি পেতে চাই। কিন্তু হারুন আর রশীদের জীবন সংগ্রাম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। সে কারও দয়া-করুণা বা সুদৃষ্টি পেতে চায় না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই পরিশ্রম করে জীবন ও সংসার চালাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ ঢাকা পোস্টকে জানান, হারুন পৌরেসভায় অনেক দিন ধরে নগর মাতৃসদনের পাশে ছোট একটি টং দোকানে চা বিক্রি করে আসছেন। পৌরসভা থেকে মাঝেমধ্যেই হারুনকে সহায়তা করা হয়। আমি মনে করি হারুনের কাছ থেকে জীবনসংগ্রাম শেখার অনেক কিছু আছে। সে প্রতিবন্ধী হয়েও নিজে উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছে। কারও কাছে হাত পাতেননি।

এসকে রাসেল/এনএ