পরিবারের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া সুমা

বাবা অশোক রায় ভিক্ষুক। মা শিখা রায় কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সুমা রায়। তাদের ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তিন বেলা খাবার জোটানো যেখানে কষ্টের সেখানে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে সুমা। সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। আর এ নিয়ে পুরো এলাকায় চলছে আলোচনা। 

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের বাসিন্দা সুমা রায় এখন দুশ্চিন্তায় তার কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে। সুমা জানায়, তার বাবা অশোক রায় প্রতিবন্ধী। তিনি বিভিন্ন স্থানে হাত পেতে যে টাকা পান সেই টাকায় সংসার চলে। সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পায়নি তারা। সংসারের প্রয়োজনে লেখাপড়ার পাশাপাশি সে অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে।  

সে বলে, জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছি। কিন্তু কীভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের ঘর নেই, পড়ার একটি টেবিল পর্যন্ত ছিল না। আমার ভালো একটি জামাও নেই। ঘরে খাবার থাকতো না। আমি না খেয়ে অনেক দিনই স্কুলে যেতাম। আমার বই কেনার মতো কোনো সামর্থ্য ছিল না। 

সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার করে পড়াশোনা চালিয়ে আসা সুমা বলে, কষ্ট করেছি। তবু লেখাপড়া ছাড়িনি। আমার স্বপ্ন লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হব। আমার আশা আছে, আশা পূরণের সামর্থ্য নেই। যেদিন এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে, সেদিনও আমাদের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। আমি সকালে অন্যের জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে গিয়েছি। জমি থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি এসে তারপর শিক্ষকদের কাছে আমার ফলাফল জানতে গেছি। তখন আমি জানতে পারি আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি।

সুমা রায়ের বাবা অশোক রায় ও মা শিখা রায় জানান, মেয়ে ভালো ফলাফল করে কৃতকার্য হয়েছে বলে তারা শুনেছেন। কিন্তু এখন আর মেয়েকে লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য তাদের নেই। এজন্য কলেজেও ভর্তি করাতে চান না।

বারপাইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র রায় বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও সুমা রায় মেধাবী ছাত্রী। সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার কাছ থেকে স্কুল নামমাত্র বেতন নিত। এই মেধাবী ছাত্রীকে সহায়তায় সবাই এগিয়ে আসলে হয়তো সে একদিন ডাক্তার হতে পারবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর