বেলা তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। সহপাঠীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে বসে ছিল দেশব্যাপী আলোচিত মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই শিশু সুরাইয়া। কিন্তু অন্য শিশুদের মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই তার। দুটি পা, একটি হাত ও একটি চোখ তার পুরোপুরি অকার্যকর। তাই আজ বুধবার (৫ ডিসেম্বর) মায়ের কোলে চড়ে বিদ্যালয়ের এসেছে সে। গত রোববার সে প্রথম স্কুলে আসে।

বলছিলাম ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরায় দুদল সন্ত্রাসীর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়া সেই শিশু সুরাইয়ার কথা। এবার মাগুরা পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সুরাইয়া। হাতে পেয়েছে নতুন বই। মনে দারুণ আনন্দ। কিন্তু সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করার মতো সামর্থ্য নেই তার।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার কারণে তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। সুরাইয়ার বিষয়ে শিক্ষকদের অধিক যত্নশীল হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, আল্লাহ বাঁচানোর মালিক। তাই আমার মনি পেটে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়েও আজ বেঁচে আছে। কিন্তু ডাক্তার কইচে (বলেছে) দ্রুত চোখের চিকিৎসা করানো না গেলে ভালো চোখটিও নষ্ট হয়ে যাবে। সমাজের বিত্তবানরা যদি আমার একটু সহযোগিতা করতো, তাহলে হয়তো আমার মনি ভালো হয়ে যেত।

সুরাইয়ার বাবা চা বিক্রেতা বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, আপনারা দোয়া করেন যাতে আমার সুরাইয়া লেহাপড়া (লেখাপড়া) শিখতি পারে।

উল্লেখ্য, টিউবওয়েলের পাড়ে কাজ করা অবস্থায় ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরায় দুদল সন্ত্রাসীর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে এলোপাথারি গুলিতে নাজমা বেগম এবং তার গর্ভে থাকা শিশু সুরাইয়া গুলিবিদ্ধ হয়। মাগুরা সদর হাসপাতালের সার্জন শফিউর রহমান জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুরাইয়াকে পৃথিবীর আলো দেখান। তবে সুরাইয়ার মধ্যে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

সুরাইয়ার বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তার মা নাজমা বেগম জানালেন, তার ডান চোখটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁ চোখটির অবস্থাও ভালো না। চিকিৎসক বলেছেন, ডান চোখে আর দেখতে পাবে না সে। ডান চোখ তুলে না ফেললে বাম চোখও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে তার গলায় একটি টিউমারও ধরা পড়েছে। সুরাইয়ার ডান পাশটিতে জোর কমে যাচ্ছে। ডান হাতে সে কাজ করতে পারে না। টাকাপয়সা থাকলি তার উন্নত চিকিৎসা করাতাম।

এদিকে মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মাগুরা আদালতের পিপি এসকেন্দার আজম বলেন, দীর্ঘদিন করোনাভাইরাস এবং সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক না থাকায় মামলাটি মূলত ধীরগতিতে চলছিল। আশা করি শিগগিরই একটা সুরাহা হবে।

অপূর্ব মিত্র/এমএসআর