শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুলুখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের পর আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। 

এ সময় দুই সাংবাদিকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। 

পুলিশ ও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, বুধবার সকালে উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শহীদুল ইসলাম সিকদার, এমদাদ সিকদার, রুনা আক্তার, দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী ও এনামুল হক ব্যাপারী। 

দোলোয়ার হোসেন ব্যাপারী সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হকের চাচাতো ভাই। দুপুর সোয়া ২টার দিকে ২২ নম্বর দুলুখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা করেন দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারীর সমর্থকরা। তারা বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি ছুড়ে ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর ভোটকেন্দ্র দখল করে তিনটি ব্যালট বাক্স, ৩ হাজার ব্যালট ও নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

যাওয়ার সময় তারা বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়ে ভোটকেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, আনসার সদস্য ও ভোটাররা সেখানে আটকা পড়েন। তারা দরজা ভেঙে সেখান থেকে প্রাণে বাঁচেন। 

সেখানে উপস্থিত দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক এমরুল হাসান বাপ্পী, যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান, প্রথম আলোর সত্যজিৎ ঘোষ, কালেরকণ্ঠের শরীফুল আলম ইমন ও সাংবাদিক হেমন্ত দাস প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে আটকা পড়েন। তাদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও গুলি করা হয়। কেন্দ্রে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়ে কেন্দ্র রক্ষার চেষ্টা করেন। তাদের গুলি শেষ হয়ে গেলে তারাও পিছু হটেন।

এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন দাস গুপ্তর নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেন। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্কুল ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলাকারীরা অন্তত ৮ নারী আনসার সদস্য ও নারী ভোটারদের গহনা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন।

নারী আনসার সদস্য তরিকত নেছা বলেন, বোমা ও গুলির কারণে কেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয়  নিই।  ব্যালট বাক্স ও ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে স্কুল ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের মারধর করে গায়ের গহনা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ইকবাল সিকদার বলেন, হামলার সময় কেন্দ্রের মধ্যে আটকা পড়ি। বাহির থেকে কক্ষ আটকে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। দরজা-জানালা ভেঙে ভবন থেকে বাহিরে এসে আমরা প্রাণে বাঁচি।

আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম সিকদার বলেন, দেলোয়ার হোসেন বেপারীর সমর্থকরা ভোট বানচাল করার জন্য তিনটি কেন্দ্রে হামলা চালায়। সকাল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক ছড়ায়। দুপুরের দিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কেন্দ্রে আগুন দেয়। 

সাংবাদিক শরীফুল আলম ইমন বলেন, আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দুপুরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুলুখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাই। সেখানে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখে রুমের মধ্যে। তারা ভোটারদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য গুলি ছোড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কয়েকজন আহত হয়। আমার ও যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধির মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।

এদিকে বিকেল ৫টার দিকে চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বেপারীর মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, দুপুর সোয়া ২টায় আমার কেন্দ্র দখলের জন্য সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কেন্দ্র রক্ষা করার জন্য গুলি ছুড়তে বলি। এ সময় তারা গুলি ছোড়ে। কিন্তু গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। তারা কেন্দ্রে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মারধর, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তারা স্কুল ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকর কর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করি। এ ঘটনায় পুলিশ গুলি ছোড়ে। তবে কত রাউন্ড গুলি ছুড়েছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় মামলা করা হবে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর