মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর ভৈরব নদীর ওপর সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয় বুড়িপোতা ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষকে। একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রায় ৫০ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

কৃষিপণ্য ও রোগী বহন করতে হয় ঝুঁকিপূর্ণভাবে। পারাপারের সময় প্রায়ই সাঁকো ভেঙে নদীতে পড়ে আহত হতে হয়েছে অনেককে। চিকিৎসার জন্য শহরে আসতে অনেকেই জীবন হারান। সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো ব্যবহারে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

এদিকে ভোটের সময় এলে জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতির বাণী ফুটে জনগণের কাছে। বারবার মাপজোখ হলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি একটি সেতু। তবু আশায় বুক বেঁধে আছেন মানুষ। তবে দ্রুত সেতু নির্মাণ হলে ভুক্তভোগীদের দুঃখ ঘুচবে এমন প্রত্যাশা করছেন জনপ্রতিনিধিরাও। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকার মানুষের দুর্দশার অবসান হবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের রাধাকান্তপুর গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে ভৈরব নদী। আশপাশে নেই কোনো সেতু। চলাচলের জন্য প্রতিবছর চাঁদা তুলে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। বছর পার হতে না হতেই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিবছরই সাঁকো নির্মাণে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হয় অসহায় এসব মানুষের। ভারী যানবাহন চলাচল না করতে পারায় রোগী বহন করতে স্বজনদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। অনেক দূরের রাস্তা ঘুরে আসতে হয় শহরে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হয়।

কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় কৃষকদের পড়তে হচ্ছে বিপদে। সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারে নিতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও সাঁকো পার হতে হয় ভয় ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

স্থানীয় রিকশাচালক মকলেচ জানান, প্রতিদিন ভৈরব নদীর ওপর তৈরি বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাত্রী নিয়ে পারাপার হতে হয়। মনে সব সময় ভায় কাজ করে কখন যেন ভেঙে পড়ি পানিতে। তবু উপায় না থাকায় এদিক দিয়েই যাতায়াত করি। ডিজিটাল যুগেও বাঁশের সাঁকো এটি একটি বেমানান প্রথা।

স্থানীয় প্রবীণ আকবার আলী জানান, বাঁশের সাঁকো ভেঙে মাঝেমধ্যেই মানুষ আহত হন। কিছুদিন আগেও সাইকেল নিয়ে পার হতে গিয়ে নিফাজ উদ্দীন নামের এক বৃদ্ধ সাইকেলসহ পানিতে পড়ে যায়। স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি। দ্রুত এখানে একটি সেতু দেখে যেতে চান তিনি।

রাধাকান্তপুর গ্রামের আমেনা খাতুন জানান, বর্ষার সময় নৌকায় পার হতে হয়। পানি কমে গেলে বাঁশের সাঁকো। জরুরি চিকিৎসা নিতে শহরে গেলে এখানে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমাদের দুর্দশা ঘোচাতে সরকারি সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।

বাড়িবাকা গ্রামের মরতুজা ফারুক রূপক বলেন, ভোটের সময় এলাকাবাসীকে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন সবার আগে ব্রিজ নির্মাণ করে দেবেন। ভোট হওয়ার পর আর কারও খোঁজ থাকে না। সরকার যায় সরকার আসে, কিন্তু দুপারের মানুষের ভাগ্যবদল হয় না। দেশের সবখানেই ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। এই ডিজিটাল যুগে বাঁশের সাঁকো যেন এক বেমানান মাধ্যম। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্রিজ নির্মাণের আকুল আবেদন করেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি।

স্কুলশিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, ১৯৮৪ আমরা বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। অনেকটা হারিকেনের নিচে অন্ধকারের মতো। আমাদের সাথে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু তা কাজে পরিণত হয় না।

বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহজামান বলেন, আমার ইউনিয়নবাসীর প্রাণের দাবি, রাধাকান্তপুরে একটি সেতু নির্মাণ হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট মহলে যোগাযোগ করেছি। ইতোমধ্যে জমি জরিপের কাজ সমাপ্ত করেছে এলজিইডি। দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়তো কাজ শুরু হতে পারে। তা ছাড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ অঞ্চলের মানুষকে কথা দিয়েছেন দ্রুত সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এখানে সেতু নির্মাণ হলে ১০ হাজার মানুষের দুঃখ লাঘব হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ওই এলাকার মানুষের দুর্দশার কথা আমরা জানি। এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। পরিদর্শন শেষ হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এলাকার মানুষ কাজের বাস্তবায়ন দেখতে পাবে।

আকতারুজ্জামান/এনএ