১২ হাজার ৬৬৬ কিলোমিটার দূরের নিউইয়র্ক শহরে বসে নিজ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় মানুষের জন্য নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন ১৮ বছরের তরুণী ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা। ২০২১ সালে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র মানুষদের তৃষ্ণা মেটাতে ৩২টি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন।

শুধু টিউবওয়েল স্থাপন করাই নয়, একই সঙ্গে তিনি গেল বছর অসংখ্য মানুষকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তায়ও করেছেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শীতার্ত মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন শীতবস্ত্র।

সর্বশেষ টাঙ্গাইলের ৮২ বছর বয়সী অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কুমার এবং ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের উদ্ধারকারী ট্রলারচালক মিলনকেও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন তিনি। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং মাধ্যম ইউটিউবের আয় থেকে এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডে অর্থ ব্যয় করছেন বলে জানান তিনি।

ঢাকা পোস্টকে প্রিসিলা জানিয়েছেন, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ৩২টি টিউবওয়েল স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে একটি, ফেনী সদর উপজেলার কদলকাজীতে একটি, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মহরদ্দিরচরে দুটি ও এনায়েতনগরে দুটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চর মাধবপুরে একটি ও নবীনগর উপজেলার বাশারুক গ্রামে একটি, নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার উত্তর রাজাপুরে একটি, বান্দরবানের লামা উপজেলার আমতলীপাড়ায় একটি ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার লক্ষিধরদিয়ারে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার আড়ুয়াডাঙ্গায় একটি, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দক্ষিণপাড়ায় একটি ও ধুনট উপজেলার ছোট চিকাশী গ্রামে একটি, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বংশীপুরে একটি ও তালা উপজেলার আটারই গ্রামে একটি, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কুসুমতৈড় এলাকায় সাতটি, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কিশামত ছাওলায় একটি, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজানে একটি ও ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়ায় একটি টিউবওয়েল বসানো হয়।

অপরদিকে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রাজকুঞ্জিতে একটি, চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চরম্বায় একটি, নেত্রকোনার কমলাকান্দা উপজেলার রামপুরে একটি, গোপালগঞ্জে দুটি ও ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার চড়িয়াল বিল বাজারে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দেয়া হয়েছে।

প্রিসিলা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কিছু অসহায় মানুষ আছেন, যাদের কাছে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করার মতো সামর্থ্য নেই। তারা দিনের পর দিন অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে পান করছিলেন। অনেকে আবার পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করছিলেন। এমন তথ্য পাওয়ার পর যাচাই করে ওইসব মানুষের বাড়িতে টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছি আমরা। এছাড়া কিছু শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে টিউবওয়েল দিয়েছি। আমি চাই এমন মানুষগুলোর জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে। 

প্রিসিলা বলেন, আমার এ সামাজিক কর্মকাণ্ড একটি চলমান প্রক্রিয়া। টিউবওয়েল দেয়ার পাশাপাশি যখনই মানুষের অসহায় জীবনের কথা শুনেছি তখনই চেষ্টা করেছি তাদের জন্য কিছু করার। দোয়া করবেন যেন এ কাজ চালিয়ে যেতে পারি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু বিশ্বস্ত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তারা আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেন। তাদের কারণে এ কার্যক্রমগুলো সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে পারছি। তারা তথ্য দেয়া থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করাসহ দারুণ সহযোগিতা করছেন। তাদের কারণেই মূলত এসব কাজ চালিয়ে যেতে পারছি। এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

এমএএস