ঔষধি গাছের বাগান গড়তে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়ন। কৃষিনির্ভর এই ইউনিয়নে দিন দিন বাড়ছে ঔষধি গাছের বাগান। অন্য ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি ঔষধি গাছের চারা রোপণে ঝুঁকেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। অনেকে বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ায় অন্যদেরও বেড়েছে আগ্রহ। এখন বামনী, নলেয়া বা চাউয়ার বিল ঘিরে নয়, কৃষকদের স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন স্বপ্ন ঔষধি বাগানজুড়ে।

সম্প্রতি পাঁচগাছি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। ঔষধি গাছের বাগান করে কৃষক মেহেদুলের ভাগ্য বদলে যাওয়ার গল্প ছুঁয়ে গেছে গ্রামের অন্যদেরও। আর তা প্রত্যক্ষ করে এমন বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন শতাধিক কৃষক। আশপাশের গ্রামগুলোতেও বইছে মেহেদুলের ঔষধি বাগানের সুবাতাস।

ঔষধি বাগনে স্বাবলম্বী পীরগঞ্জের কৃষক মেহেদুল

জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে মেহেদুল ইসলাম। ৭ বছর আগে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর শুরু করেন বিভিন্ন জাতের গাছগাছালির চারা রোপণ। সঙ্গে ছিল ওষুধি গাছের চারাও। যা বর্তমানে বাগানে পরিণত হয়েছে। তবে অন্য গাছের চেয়ে ঔষধি গাছই বেশি তার বাগানজুড়ে।

মেহেদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৪ সালে কৃষি অফিস থেকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর বাগান করতে শুরু করেছি।  এখন যেভাবে সাড়া মিলছে, শুরুতে এমনটা কখনো ভাবনায় আসেনি। বিভিন্ন জাতের গাছ থাকলেও আমার বাগানে ঔষধি গাছই বেশি। বর্তমানে বাগানজুড়ে তুলসী, কালোমেঘ, বাসক ও অর্শগন্ধা ছাড়া অন্যান্য জাতের গাছ রয়েছে।

কৃষিকাজের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে হয় মেহেদুলকে। তার বাগানের চারা ও ঔষধি পাতার চাহিদাও বেশি। সম্প্রতি ওষুধ কোম্পানি একমি মেহেদুলের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। তার বাগান থেকে সব ধরনের ঔষধি গাছের পাতা ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করবে ওই কোম্পানি। এই বাগান গড়ার পর থেকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি বলেও জানান এই কৃষক।

বাগানের অগ্রগতি ও সফলতা দেখে পাঁচগাছি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষক তার বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাগান করেছেন। এভাবে ওই ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কৃষক এখন ঔষধি গাছের ছোট ছোট বাগানে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।

মেহেদুলের দাবি, এ বছর তার বাগান থেকে ১৫ টন তুলসীপাতা, ৮ টন বাসক, কালোমেঘ ও অর্শ্বগন্ধা ২ টনের চাহিদা রয়েছে। বাগান গড়ার দুই বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৬ সাল থেকে আরো কয়েকটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানিতে পাতা বিক্রি করে আসছেন তিনি।

একই ইউনিয়নের পানেয়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে গোলাম কিবরিয়াও গড়েছেন ঔষধি গাছ বাগান। তবে মেহেদুলকে দেখেই বাগান গড়ার কাজটা শুরু করেছিলেন এই যুবক। বর্তমানে তার পরিবারও স্বাবলম্বী বাগানের বাড়তি আয়ের টাকায়।

ঢাকা পোস্টকে কিবরিয়া বলেন, তার পরিচিত অন্তত ২০ জনসহ পুরো ইউনিয়নে এখন শতাধিক কৃষক ঔষধি গাছের বাগান মালিক। যাদের বেশির ভাগ কৃষকই মেহেদুলের কাছ থেকে প্রতিবছর চারা ও বীজ সংগ্রহ করে আসছেন। অনেকে আবার নিজের বাগানের ঔষধি পাতা মেহেদুলের মাধ্যমে কোম্পানিতে বিক্রিও করছেন।

স্থানীয় নাসিরাবাদ, পাইকান, জাহাঙ্গীরাবাদ, পাঁচগাছী ও পানেয়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, ঔষধি গাছের চাষাবাদ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ গুরুত্ব বাড়িয়েছে। পাশাপাশি একটি ব্যাংক থেকে ইউনিয়নের শতাধিক কৃষককে ১ লাখ টাকা করে ঋণ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। তবে গাছের পাতা বিক্রি করে মোটামুটি ভালো আয় হওয়ায় অনেকেই ঔষধি বাগানে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, এক দশকের মধ্যে পাঁচগাছী ইউনিয়নে ঔষধি গাছ বাগানের বিপ্লব হবে। সেখানকার কৃষকরা যেমন পরিশ্রমী তেমন ঔষধি বাগানে বেশ আগ্রহী। আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই নিজেদের জমিতে ঔষধি গাছ লাগিয়ে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর