দূরপাল্লার বাসে চেপে নিজ নির্বাচনী এলাকা শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) থেকে ঢাকা গেলেন মতিয়া চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় নকলা থেকে লোকাল বাস সোনার বাংলা পরিবহনে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এ সময় স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের লোকজন মতিয়া চৌধুরীকে বিদায় জানাতে আসেন।

বাংলার অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য। এছাড়াও তিনি তিন দফায় শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে নির্বাচিত এমপি। তবে এবার মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এ দায়িত্বে সরকারি কোনো গাড়ি বরাদ্দ না থাকায় তিনি তার গানম্যান রেজাউল করিম ও ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) শাহজালালকে নিয়ে ঢাকা থেকে নকলা যাতায়াত করেন। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে মতিয়া চৌধুরী বাসে করে নকলায় তার নিজ বাসভবনে পৌঁছান। এরপর গত ৫ জানুয়ারি বুধবার উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার এবতেদায়ী শাখার সেরা ১০ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। 

ওইদিন নকলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের ৪৯০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ওইসব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়াও (৫ জানুয়ারি) উপজেলার উরফা ইউনিয়নের মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঝেও কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী আজ বৃহস্পতিবার ৬ জানুয়ারি নালিতাবাড়ীতে ৩ হাজার ৪৫০টি কম্বল বিতরণ করেন। এদিন উপজেলার বাঘবেড়, কলসপাড়, নন্নী, পোঁড়াগড়, নয়াবিল, রাজনগর ও পৌরসভার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার এবতেদায়ী শাখার সেরা ১০ মেধাবী শিক্ষার্থী ও মসজিদের ইমাম এবং মুয়াজ্জিনদের মাঝেও কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা বাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা আ.লীগের সদস্য ছানুয়ার হোসেন ছানু ঢাকা পোস্টকে জানান, মতিয়া চৌধুরী সাধারণ জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য ভাবেন। তিনি সবসময় গরিব অসহায় মানুষদের জন্য কাঁদেন। মতিয়া চৌধুরী একজন বর্ষীয়ান নেত্রী। তিনি চাইলে যেকোনো সময় ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে পারেন। কিন্তু সেটি না করে মতিয়া চৌধুরী পাবলিক বাসে চড়ে ঢাকা থেকে শেরপুর যাতায়াত করেন।

এ ব্যাপারে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মতিয়া চৌধুরী আমাদের আইডল। লোভ-লালসা ত্যাগ, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মিতব্যয়ী, সততা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা সবকিছুতে উনার থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রী থাকার পরও আচরণবিধির প্রতি খেয়াল রেখে তিনি কখনও এলাকায় সরকারি গাড়িতে চলাচল করেননি। তিনি খুব সহজ ও স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত। 

জিন্নাহ আরো জানান, কয়েক বছর আগে রাজলক্ষী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষী উৎসবে যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি। সেই সময় মতিয়া আপা সরকারি গাড়িতে উঠেননি। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অন্য গাড়িতে করে অনুষ্ঠানে পৌঁছেছিলেন তিনি ।

অপরদিকে, বাসে জানালার পাশে বসা মতিয়া চৌধুরীর ছবিটি ফেসবুকজুড়ে ঘুরছে। সেটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক মন্জুরুল আহসান বুলবুল লিখেছেন,  মতিয়া আপার বাসায় একবার আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তার রাজনৈতিক দর্শন বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কথা হতেই পারে। কিন্তু তার সততা সাদামাটা জীবন এগুলো নিয়ে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর এ সাধারণ জীবনযাপনই তাকে অসাধারণ করে তুলেছে। জানি বিলাসী জীবনযাপন করা রাজনীতিবিদরা তাদের কাছ থেকে কিছু শিখবে না। সৈয়দ আশরাফ, মতিয়া চৌধুরীদের জন্য তাই আজীবন ভালোবাসা। 

জাহিদুল খান সৌরভ/এমএএস