শীত মানেই খেজুর রস আর পিঠাপুলির আয়োজন। গ্রামের অনেক বাড়িতে রসের শিন্নি এখনো ঐতিহ্যের সুবাস ছড়ায়। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা রসের ঘ্রাণে জিভে জল আসে। গরম রস খেতে সবাই যেমন পছন্দ করেন, তেমনই অনেকে কাঁচা রস খেতেও পছন্দ করেন। এই রস বিক্রি করে আবার অনেকে অন্য পেশার পাশাপাশি বাড়তি অর্থ উপার্জন করছেন। তেমনই একজন লক্ষ্মীপুরের আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের জগতবেড় গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি কৃষক। প্রতি বছর পৌষ মাসে তিনি খেজুর রস বিক্রি করেন।

এ বছর ৬০টি গাছ রস আহরণের জন্য প্রস্তুত করেছেন আনোয়ার। এর মধ্যে প্রতিদিন ৩০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি। ১০-১১ হাড়ি রস পান; প্রতি হাড়িতে ৫ লিটার করে রস থাকে। সে হিসেবে প্রতিদিন ৫৫ লিটারের মতো রস পান তিনি। ৩৫০ টাকা দরে প্রতি হাড়ি রস বিক্রি করেন। শুধু পৌষ মাসেই তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার রস বিক্রি করেন। গাছ মালিকদের অর্ধেক টাকা দিয়ে বাকি ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হয় তার। 

আনোয়ার বলেন, সারা দেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও খেজুর গাছ বিলীন হওয়ার পথে। খেজুর গাছের রস সবার পছন্দ। তবে গাছের যত্ন কেউ নেয় না। গাছ দিয়ে উপার্জন করে কিন্তু যত্ন নিতে ভুলে যায়। কয়েক বছর পর হয়তো খেজুর গাছ খুঁজেও পাওয়া যাবে না। 

রস কম পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, সঠিক কারণ তো আর আমি জানি না, তবে খেজুর গাছের পাশে অন্য গাছপালা আছে। এতে মাটি থেকে যে উপাদান খেজুর গাছ গ্রহণ করার কথা তা কম পাচ্ছে। আবার অন্য প্রজাতির গাছ খেজুর গাছকে বাড়তেও দেয় না ঠিকমতো। এছাড়া সারা বছর গাছের মালিকরা কোনো যত্ন নেয় না, এ কারণেও রস কম পাওয়া যায়।

কৃষক আনোয়ার বলেন, পৌষ মাসে তার অন্য কাজ কম থাকে। সেজন্য এ সময় তিনি খেজুর রস সংগ্রহের কাজ করেন। প্রতি বছর মৌসুম এলে গাছ মালিকরা তার কাছে আসেন। তাদের আবদারেই তিনি গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। প্রতি গাছে রসের অর্ধেক তার আর অর্ধেক মালিকের। অথবা বিক্রি করলে অর্ধেক টাকা তার আর অর্ধেক গাছের মালিকের।

রস বিক্রির নিয়ম প্রসঙ্গে আনোয়ার বলেন, বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩০টি গাছে হাড়ি বসানো হয়। একেকটি গাছে ৪-৫ মিনিট করে সময় ব্যয় হয়। বড় গাছ হলে সময় একটু বেশি লাগে। তবে এক গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব বেশি। এতে সময় বেশি লাগে। রাত ৩-৪টার দিকে উঠে গাছ থেকে হাড়ি নামানো হয়। পরে রস নিয়ে এলাকার বাজারে বিক্রি করি। আবার অনেকে ফোন দিয়ে রস দিতে বলেন।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি/জেএস