মাদারীপুরে ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে বিপর্যস্ত জনজীবন। কুয়াশার কারণে দূরের জিনিস দেখা না যাওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল। এতে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের হাজারো খেটে খাওয়া মানুষ।

শনিবার (০৮ জানুয়ারি) ভোর থেকে মাদারীপুর পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে পুরো নগরী। সড়কে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি খুবই কম। কেউ কেউ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। প্রধান সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ফুটপাতের অধিকাংশ দোকানপাট রয়েছে বন্ধ। জীবিকার তাগিদে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা নিয়ে চালকরা বের হলেও যাত্রী সংকট রয়েছে।

কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বেড়েছে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চল এলাকার বাসিন্দাদের। মাদারীপুর জেলার আড়িয়াল খাঁ, কুমার, কৃতিনাশা, পদ্মার চর, বিল পদ্মাসহ আরও কয়েকটি নদ-নদী অববাহিকার প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের মানুষ শীতে কষ্ট করছেন।গত বছর বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। বছরের শুরুতেই প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে এসব এলাকার খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। রোজগার কমে যাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অধিকাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার।

রিকশাচালক জব্বার ফকির বলেন, অনেক ঠান্ডা আর কুয়াশা পড়ছে। অনেকক্ষণ ধরে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো যাত্রী পাইনি। শীতে রোজগার কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

চর পখিরা এলাকার কৃতিনাশা নদীর পাড়ের বাসিন্দা রহিম বেপারি বলেন, অনেক বেশি শীত পড়ছে। শীতের কারণে কাজে যেতে পারছি না। একদিন কাজ না করলে পরের দিন সংসার চলে না। খুব সমস্যায় আছি।

এদিকে সদর হাসপাতালসহ উপজেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডাজনিত সমস্যায়। গত ৭ দিনে ঠান্ডাজনিত সমস্য নিয়ে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ২০০ জন রোগী। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগী বেশি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮ জন। হাসপাতালের বেড না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে মেঝেতে অবস্থান করছেন।

এক বছরের বাচ্চাকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মিনা বেগম বলেন, শীত বাড়ায় বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। বাবুর অনেক ঠান্ডা লেগেছে। ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। এজন্য হাসপাতালে নিয়ে আসছি।

স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন রহিম বেপারী। তিনি বলেন, হাসপাতালে বেড না থাকায় মেঝেতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

মাদারীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহম্মদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক বেশি। তাদের সুচিকিৎসার জন্য আমরা প্রস্তুত। এছাড়া খেজুরের রস খাওয়ার ফলে নিপা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। সে ব্যাপারে আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমারা ইতোমধ্যে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা প্রতিটি উপজেলায় শীতবস্ত্র বিতরণ করব। বিশেষ করে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

নাজমুল মোড়ল/এসপি