কলাপাড়ায় লালুয়া ইউনিয়নের চরচান্দুপাড়া গ্রামের সুলতান চৌধুরীর প্রথম সন্তান মো. সেলিম। অভাবের তাড়নায় খাবার জোগাড় করা যখন কষ্টকর, তখন ছেলের লেখাপড়া করানো ছিল দুরূহ ব্যাপার। বাবা সাগরে অন্যের ট্রলারে মাছ ধরায় ব্যস্ত। তার সংসারের অভাব যেন পিছু ছাড়ছে না।

এদিকে ছেলের মেধাও শূন্যের কোঠায়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করার পর লেখাপড়া যখন সমাপ্তির পথে, তখন এগিয়ে এলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল বাশার। শিক্ষার্থীকে সাহস ও ভালোবাসা দিয়ে জয় করলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেলিম পড়াশোনা করে কোনোরকমে জেএসসি পাস করার পর প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের বেতনসহ সব পাওনা মওকুফ করা হয়। তবু পড়াশোনায় তার অনীহা। অভাব যেন তাকে এগোতে দিচ্ছে না। ২০২০ সালের পরীক্ষার্থী হয়েও ফরম পূরণ করেনি। শিক্ষক বাসার পিছু হটলেন না। আবারো শরণাপন্ন হলেন সেলিমসহ তাদের পরিবারের। অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে ২০২১ সালের ফরম পূরণ করালেন। তার সহপাঠীসহ অনেকেই নিরুৎসাহিত করতে লাগল। কারণ সেলিম লেখাপড়ায় বরাবরের মতোই দুর্বল।

সর্বশেষ ২০২১ সালে সেলিম এসএসসি পরীক্ষা দিল। পাস করল জিপিএ-২.০০ পেয়ে। আনন্দে আত্মহারা সব শিক্ষক। সেলিম বিদ্যালয় এলে সবাই তাকে স্বাগত জানিয়ে মিষ্টিমুখ করালেন। আবারও প্রমাণিত হলো ভালোবাসা দিয়ে সবকিছুই জয় করা সম্ভব। সেলিম তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

এসএসসি পাস করার পর অনুভূতি জানিয়ে মো. সেলিম বলে, বাশার স্যার আমার বাবার কাজটি করেছেন। স্যার চেষ্টা না করলে কিছুতেই আমি এ অবস্থানে আসতে পারতাম না। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।

সেলিমের বাবা সুলতান চৌধুরী বলেন, সাগরে মাছ ধরে চার সন্তান নিয়ে কোনোরকম সংসার চালাই। কিন্তু তার লেখাপড়া কীভাবে চালাব? বাশার স্যারের চেষ্টায় সেলিম এবং বাকি কন্যাদের স্কুলে ভর্তি করতে পেরেছি। আমি আবুল বাশার স্যারের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

সেলিমের সহপাঠী ফেরদৌস খান ও মো. নাহিদ বলে, সেলিম ঠিকমতো স্কুলে আসতে চাইত না। বাশার স্যারের চেষ্টায় আজ সে এসএসসি পাস করছে।

শিক্ষক আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘স্যার, আপনার সেলিম মেট্রিক পাস করেছে। মিষ্টি খাওয়ান।’ এমন আবদার করছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শুনে ভালো লাগছে। সেলিমের সংসারের অভাব এবং মেধা কম থাকায় সে স্কুলে আসতে চাইত না। আমি বিশ্বাস করি চেষ্টা করলে সর্বক্ষেত্রেই সফল হওয়া সম্ভব।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জুনায়েদ হোসেন খান বলেন, সেলিম পাস করায় আমরা সবাই খুশি। অদম্য চেষ্টা এবং অনুপ্রেরণা দেওয়ায় ধন্যবাদ জানাই শিক্ষক আবুল বাশারকে।

কাজী সাঈদ/এনএ