অ্যাডভোকেট মো. সাদিকুল ইসলাম নাদিম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. সাদিকুল ইসলাম নাদিম। গত বুধবার (৫ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে টেলিফোন প্রতীকে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩৯৯ ভোট। নির্বাচনে অংশ নেওয়া মোট সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে তার অবস্থান সপ্তম। সব প্রার্থীই তার থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন। 

নির্বাচনে এমন ভরাডুবির পর আজীবনের জন্য রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাদিকুল ইসলাম নাদিম। নির্বাচনের পর বারোঘরিয়া ইউনিয়নের জনগণকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা এবং নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি এ ঘোষণা দেন। 

শনিবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাদিকুল ইসলাম নাদিম। তিনি নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। 

রিটার্নিং কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বেসরকারিভাবে ঘোষণা করা ফলাফল সূত্রে জানা যায়, বারঘরিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুন-অর-রশীদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৭০৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আসলাম উদ্দিন চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৭২ ভোট।  মোটরসাইকেল প্রতীকে আল-আমিন ২ হাজার ১৪১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এছাড়াও ঘোড়া প্রতীকে নাঈমুল হক ১ হাজার ৫৩২ ভোট, আনারস প্রতীকে মো. কামরুজ্জামান ১ হাজার ৩৮৯ ভোট ও অটোরিকশা প্রতীকে ফিরোজ কবির ১ হাজার ৩৪৯ ভোট পেয়েছেন।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বারোঘরিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের সাতজন প্রার্থীর মধ্যে শুধু অ্যাড. মো. সাদিকুল ইসলাম নাদিম ছাড়া বাকি ছয়জনই হাজারের ওপরে ভোট পেয়েছেন। চশমা প্রতীকে তিনি ৯টি কেন্দ্রে পেয়েছেন মোট ৩৯৯ ভোট। ৭ ভোট করে পেয়েছেন দুইটি কেন্দ্রে, একটি কেন্দ্রে পেয়েছেন ১৩ ভোট, ২৩ ভোট পেয়েছেন একটি কেন্দ্রে, একটিতে ২৬ ভোট পেয়েছেন, একটিতে ৪৮, একটিতে ৬০, একটিতে ১০৬ ও আরেকটি কেন্দ্রে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১০৯ ভোট।

 অ্যাডভোকেট সাদিকুল ইসলাম নাদিম বলেন, যে সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন তাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত। বাকি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের শুধুমাত্র একজনই উচ্চ মাধ্যমিক পাস। বাকিগুলো এসএসসি পাস বা তারও কম। অথচ জনগণ তাদেরকেই ভোট দিয়েছে। আমি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকতা ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ ডিফেন্স এক্স সোলজারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়াও গোল্ডেন ডিএইচ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বৈধ উপায়ে উপার্জন করে সমাজসেবা করে থাকি। 

তিনি বলেন, পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করি। এ দেখে আমার ক্ষতি করতে ও টাকা খাওয়ার উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রেরণা দেয়। অথচ আমার টাকা খেয়ে তারা ভোট করেছে নৌকা প্রতীকের। আমার বংশের ভোট প্রায় প্রায় সাড়ে সাতশ। অথচ আমি পেয়েছি ৩৯৯ ভোট। জনগণ যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেছে। এভাবে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব নয়। 

সাদিকুল ইসলাম নাদিম বলেন, চেয়েছিলাম ভোটে নির্বাচিত হয়ে দুর্নীতিমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধ ইউনিয়ন গঠনে কাজ করব। কিন্তু জনগণ এসব বুঝল না। তাই রাজনীতি ও নির্বাচনের পথ থেকে আজীবনের জন্য সরে দাঁড়ালাম। তবে সমাজসেবামূলক কাজ চলমান থাকবে। 

ফেসবুক পোস্টে নিজেকে বেকুব-গাধা উল্লেখ করে লিখেছেন, আমি বিদায় নিচ্ছি পূর্বের ও পরবর্তী জীবনের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে। আজ থেকে নিজেকে বারোঘরিয়ার সন্তান বলতে খুব লজ্জাবোধ করব। বিদায় রাজনীতি, বিদায় কুচক্রী ভিলেজ পলিটিশিয়ান, বিদায় মানুষরূপী শয়তান-জানোয়ারগণ, বিদায় বারোঘরিয়াবাসী। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর