বাগেরহাটের ফকিরহাটে ট্রাক-মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষে সাকিব নামের আহত আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকায় নেওয়ার পথে মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই তিনি মারা যান।

নিহত সাকিব হাকিমপুর কওমি মাদরাসার প্রথম জামায়াতের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি ফকিরহাট উপজেলার পিলজংয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাকিমপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল মাবুদ।

এর আগে শনিবার (৮ জানুয়ারি) মধ্যরাতে ফকিরহাট উপজেলার শ্যামবাগাত মুন স্টার জুট মিলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অবস্থার অবনতি হলে সাকিবকে ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়।

রাতে নিহতরা হলেন হাফেজ আব্দুল্লাহ, আব্দুল গফুর ও সালাহউদ্দীন। তারা সবাই বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর কওমি মাদরাসার ছাত্র ছিল। নিহতদের মধ্যে আব্দুল্লাহ সদর উপজেলার রনজিতপুর এলাকার হোসাইনের ছেলে। আব্দুল গফুরের বাড়ি রামপালের ঝনঝনিয়ায় এবং সালাহউদ্দীনের বাড়ি সাতক্ষীরায়। আব্দুল্লাহ দাওরায় হাদিস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং অপর দুজন অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসায় আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে বাগেরহাটে নিজ মাদরাসার উদ্দেশে ফিরছিল। এদিকে নিহত তিন শিক্ষার্থীর জানাজা রোববার সকাল ১০টায় হাকিমপুর মাদরাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের মরদেহ নিজ নিজ এলাকায় নেওয়া হয়েছে। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় চার শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

হাকিমপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল মাবুদ বলেন, মাদরাসার ছাত্ররা শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসায় আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিল। রাতে খুলনা থেকে সিএনজিযোগে মাদরাসার উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় শ্যামবাগাত এলাকার মুনস্টার জুট মিলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ডাম্পার ট্রাকের সঙ্গে মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলে তিনজন মারা যায়। এ সময় আরও চার যাত্রী আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে সাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে পথে সে মারা যায়।

কাটাখালী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী জানান, দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ কাটাখালী হাইওয়ে থানায় এবং আহতদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঘন কুয়াশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘাতক ডাম্পার ট্রাকটি পালিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ট্রাক ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

জানাজায় অংশ নেওয়া বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বিরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আমরা সকালেই মাদরাসায় গিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দাফন-কাফনে প্রাথমিক সহায়তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের জানাতে অনুরোধ করেছি। দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত এবং পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

তানজীম আহমেদ/এনএ